ইউক্রেনের পাশে ইউরোপ, ৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা

ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ালো ইউরোপ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার চার দফা কর্মসূচি ও নতুন জোটের ঘোষণা করলেন।

কিযের স্টারমার জানমিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং এবং ইউক্রেনকে রক্ষা করতে চার দফা কর্মসূচি নিয়ে চলতে চান তারা। লন্ডনে ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপের দেশগুলির শীর্ষবৈঠকে স্টারমার বলেছেন, তারা ইউক্রেন নিয়ে ‘কোযালিশন অফ দ্য উইলিং’ বা ইচ্ছুক দেশগুলির জোটগঠনের চেষ্টা করবেন। তারা ইউক্রেনের জন্য আমেরিকার সমর্থনও চাইবেন।

এই শীর্ষবৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-সহ ১৮ জন শীর্ষনেতা যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে স্টারমার বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে তীব্র বাদানুবাদের দুই দিন পর এই শীর্ষবৈঠক হলো। তারপর চার দফা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন স্টারমার। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে স্টারমার জানিয়েছেন, ‘শীর্ষবৈঠকে চার দফা কর্মসূচি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। এই চার দফা কর্মসূচি হলো, ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়া হবে এবং রাশিয়ার উপর আর্থিক চাপ বহাল রাখা হবে। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনতে হবে এবং শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা থাকবে। ভবিষ্যৎ আগ্রাসন বন্ধ করতে এটা জরুরি। এই চুক্তি যাতে ঠিকভাবে কার্যকর হয় সেটা নিশ্চিত করতে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ গঠন করা হবে এবং তারা পরবর্তীকালে শান্তি বজায় রাখার নিশ্চয়তা দেবে।’

স্টারমার বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে দুইশ কোটি ডলার দেবে, যাতে তারা পাঁচ হাজার এয়ার ডিফেন্স মিসাইল কিনতে পারে। এছাড়াও রাশিয়ার ফ্রিজ করা সম্পদের লভ্যাংশ থেকে ২২০ কোটি ইউরো ইউক্রেনকে ঋণ হিসাবে দেয়া হবে। আমাদের অতীতের ভুল থেকে শিখতে হবে। আমরা কোনো দুর্বল চুক্তি চাই না, যা রাশিয়া আবার ভঙ্গ করতে পারে। বরং শক্তিশালী অবস্থানে থেকে চুক্তি করতে চাই। ‘

স্টারমার বলেছেন, ‘চুক্তির শর্ত রাশিয়া ঠিক করবে তা হবে না। আমরা চাই, অ্যামেরিকাও এই চুক্তি সমর্থন করুক। ট্রাম্পের সঙ্গে আমি এই বিষয়ে একমত যে, স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন। ‘

ট্রাম্প কি বন্ধু হিসাবে নির্ভরযোগ্য? এই প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেছেন, ‘শুক্রবার যা হয়েছে, সেরকম ঘটনা কেউই চায় না। তবে অ্যামেরিকা নির্ভরয়োগ্য নয়, এমন কথা আমি মানতে চাই না।’

শীর্ষবৈঠকে যোগ দিয়েছিল ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন এবং ক্যানাডা।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, ‘ইউরোপকে সামরিক দিক দিয়ে আরো সজ্জিত হতে হবে।’

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে বলেছেন, ‘যতদিন সম্ভব ইউক্রেন যাতে লড়তে পারে, সে জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ‘ইউরোপের দেশগুলিকে প্রতিরক্ষাখাতে জিডিপি-র তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ অর্থ খরচ করতে হবে। গত তিন বছর ধরে রাশিয়া ১০ শতাংশ অর্থ প্রতিরক্ষায় খরচ করছে। তাই ইউরোপকেও প্রস্তুত থাকতে হবে।’

জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হিসাবে যাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেই সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, ‘স্টারমার ও মাক্রোঁ ইউক্রেনে দীর্ঘস্থৈা্য়ী শান্তির জন্য প্রয়াসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।’

শাীর্ষবৈঠকের পর জেলেনস্কি রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করতে যান। তারপর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘লন্ডনের শীর্ষবৈঠক থেকে তার মনে হয়েছে, ইউরোপ এক হয়ে ইউক্রেনের পাশে আছে।’

তিনি বলেছেন, ‘আমরা একযোগে কাজ করব এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে শান্তি ফেরাতে চাইব।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, রয়টার্স

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.