গাজায় ৩০ বছর ধরে ছেলের অপেক্ষায় এক মা

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্দি ছেলে ফিরে আসবে, সেই আনন্দে গাজার বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন ৭৫ বছর বয়সি নাজাত ৷ যদি কিছু পাওয়া যায়, যা দিয়ে ছেলেকে স্বাগত জানাতে পারেন তিনি৷ যদিও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও হতাশাই জুটলো মায়ের কপালে৷

নাজাত বলেন, ‘আমি গাজার ওমার আল মুখতার স্ট্রিটে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, কীই বা দিতে পারি আমার ছেলেকে? জামা-কাপড়ে ভরে ফেলি ব্যাগ, টুথপিকও ভরেছিলাম ব্যাগে৷’

শনিবার ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে যেসব ফিলিস্তিনি বন্দিকে ফিরিয়ে দেবারকথা ছিল, সেই তালিকায় ছিল দিয়ার নামও৷ ১২ ঘণ্টা ধরে গাজার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে বন্দি বিনিময়ের স্থানে অপেক্ষা করেন নাজাত৷ কিন্তু ৬২০জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ফেরত পাঠালেও নাজাতের ছেলে দিয়াকে পাঠায়নি ইসরায়েল৷ দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাকি বন্দিদের মুক্ত করার আগে বাকি ইসরায়েলি বন্দিদেরও মুক্ত করা হবে এমন নিশ্চয়তা চায় তারা৷

এই খবর পাওয়ার মুহূর্ত থেকে নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না সদ্য ৫০ বছর পেরোনো দিয়ার মা নাজাত৷ তিনি বলেন, আমি সব কিছু তার জন্য প্রস্তুত করেছি, তবুও সে মুক্তি পেলো না৷ আমাকে তারা বাধ্য করে বাসায় ফিরে যেতে, কিন্তু আমি চাইছিলাম সেখানেই বসে থাকি, যত দিন না দিয়া মুক্তি পায়৷

১৯৯২ সালে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তাকে মারার কারণে কারাবন্দি হন দিয়া এল আঘা৷ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাবাসে থাকা ১৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দির একজন তিনি৷ এত দীর্ঘ সময় বন্দি থাকতে থাকতেই তিনি হারান নিজের বাবা ও বোনকে৷ কারাগারে তাকে ডাকা হয় ‘বন্দিদের অধ্যক্ষ’ নামে৷

তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, আরো ৬৩ জন বন্দি থাকার কথা গাজায়, যাদের মুক্তি দেয়ার কথা আছে এই চুক্তিতে৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বন্দির জীবিত থাকার কথা জানা গেছে৷

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আশা ছাড়ছেন না নাজাত৷ ইসরায়েলি হামলায় ভেঙে পড়া তার বাসার গায়ে এখনো ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড, যার গায়ে লেখা ‘এটা বন্দি দিয়া জাকারিয়া এল আঘার বাসস্থান৷’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.