বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে বন্ড মার্কেটের অবস্থা আরও নাজুক। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাজারমূলধনের বড় অংশ জুড়ে থাকে বন্ড ও ঋণপত্র জাতীয় অন্যান্য সিকিউরিটিজ। এখানে বাজারমূলধনে বন্ড ও ডেট সিকিউরিটিজের অংশ এক দশমাংশের কাছাকাছি। যেসব ডেট সিকিউরিটজ আছে, সেগুলোরও তেমন কোনো লেনদেন হয় না। গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবে এই বাজারের অপব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তোপখানা রোডস্থ বিআইসিএম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থসূচক সম্পাদক ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান এ কথা বলেছেন। ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান বলেন, গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব আর নানা যোগসজশে এমন সব ব্যক্তিকে বন্ড ও সুকুক ছেড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, অতীত রেকর্ড ও ভাবমূর্তি ভাল নয়। যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে সেগুলোর প্রকৃত পারফরম্যান্সও প্রশ্নবিদ্ধ, উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার ও সম্ভাব্য মুনাফা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। এসব বন্ড আগামী দিনে বিনিযোগকারীদেরকে প্রতিশ্রুত রিটার্ন তথা মুনাফা বা সুদ দিতে পারবে কি না সে বিষয়টি নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনটি হলে শুধু এসব বন্ডের বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, সামগ্রিক বন্ড মার্কেট সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তাতে আগামী দিনে ভাল প্রতিষ্ঠান ও সৎ উদ্যোক্তারা বন্ড ইস্যু করলেও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, “ব্ন্ড মার্কেটের অপব্যবহার না আটকানো গেলে বিনিয়োগকারীরা এর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অর্থসূচক সম্পাদক বিগত সময়ে যারা বন্ড এবং সুকুকের অপব্যবহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও সুকুক এবং বন্ডের বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইসিএম’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রেসিডেন্ট নাজমুস সালেহীন, সিএমজেএফ’র সভাপতি গোলাম সামদানী ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। সঞ্চালনা করেন বিআইসিএম’র প্রভাষক ফাইমা আক্তার।
অনুষ্ঠানে বিআইসিএম এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রেসিডেন্ট নাজমুস সালেহীন বলেন, বিআইসিএম দক্ষ জনশক্তি তৈরীর কাজ করে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা অনস্বীকার্য।
সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভুঁইয়া বলেন, পুঁজিবাজারে উন্নয়ননে বন্ডের বিকল্প নেই। কিন্তু এ বন্ড সম্পর্কে জানা এবং বুঝার বিষয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে। সেখান থেকেই এ আয়োজন। আশাকরি এ ধরণের প্রশিক্ষণ সেই ঘাটতি মেটাতে ভূমিকা রাখবে।
সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, শেয়ারবাজার একটি সংবেদনশীল জায়গা। এ বিটে কর্মরত সংবাদকর্মীরা অর্থনীতি এবং বাণিজ্য বিভাগের বাইরে থেকেও এসেছেন। ফলে সংবেদনশীল জায়গায় দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার জন্য সিএমজেএফ সব সময় সচেষ্ট।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.