ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ‘জ্ঞানচর্চা’র ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান মির্জা ফখরুলের

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ‘জ্ঞানচর্চা’র ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের শুধুমাত্র আন্দোলন-সংগঠন এসব করলেই চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই জ্ঞানচর্চাটা করতে হবে। জ্ঞানচর্চাই হবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে মূল কেন্দ্র। তা না হলে আমরা এগোতে পারবো না।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা মেধাবী তাদের সামনে আনতে হবে। প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, ধারণা থাকতে হবে। আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। আমি ৬০-এর দশকে ছাত্র রাজনীতি করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময় আমাদের সংগঠন পড়াশোনার জন্য স্টাডি সেল তৈরি করতো। সেখানে পড়াশোনা হতো, পরীক্ষা হতো, তারপর পদোন্নতি হতো। পদ পাওয়া নির্ভর করতো আমি কতটুকু জানি তার ওপর। এ বিষয়টা যদি আমরা ছাত্রদলের মধ্যে চালু করতে পারি, নিঃসন্দেহে ছাত্রদল হবে শক্তিশালী সংগঠন। আমি অনুরোধ রাখবো, এরকম চিন্তাভাবনা নিয়ে আসতে হবে।

আলোচনা সভায় এবার ‘স্লোগান’ না থাকায় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ খুব আমার ভালো লাগছে যে কোনও স্লোগান হয়নি, হচ্ছে না। আমার খুব আনন্দ লাগছে যে এতদিন যে কথাগুলো বলেছি, অন্তত আজ একটা বাস্তবায়ন হয়েছে। ছাত্রদল ছাত্রদল। উত্তর-দক্ষিণ স্লোগান দাও, মাঝে-মধ্যে অমুক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে- এটার দরকার নাই। আমাদের ভাই একজনই- তারেক রহমান, আমাদের নেত্রী একজনই- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের দার্শনিক, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা একজনই- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মাঝখানে কোনও ভাইটাই নাই। সবাই ডিসিপ্লিন মানতে হবে, ছাত্রদলের নেতা রাকিব, নাছিরের নেতৃত্বে মানতে হবে। অর্থাৎ একটা সুসংগঠিত ছাত্রদল গড়ে তুলতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গতকাল আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকেরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে অংশ নিতে পারবে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে তারা এখন নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা গতকাল যে কথাটা বলেছেন, ইট ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কী আমরা এটা মনে করবো যে তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেবো না, এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে ‘কতিপয় উপদেষ্টা’ নতুন দল গঠনের কৌশল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তারা চেষ্টা করছেন অতি দ্রুত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই কতগুলো সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে আদৌ নির্বাচনের ব্যাপারে তারা আন্তরিক কিনা।

ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করেই বলছি, অবশ্যই নতুন যখন রাজনৈতিক দল গঠন হবে তাকে আমরা স্বাগত জানাবো। ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যে করেছেন, আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখন দল তৈরি করবেন আমরা স্বাগত জানাবো। তার মানে এই নয় যে আপনারা সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দল গঠন করবেন। সেটি কখনোই মেনে নেওয়া হবে না, জনগণ মেনে নেবে না। আমি অন্তর্বর্তী সরকার এবং সরকার প্রধানকে বলতে চাই, আপনি অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপরে আছে সেই আস্থাও থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন প্রথম বলেছিলাম যদি এই অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। তখন একজন (উপদেষ্টা) বলেছিলেন আমি একটি এক এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক এগারোর ভুক্তভোগী, এক এগারো যারা সৃষ্টি করেছিল তারা টিকতে পারেনি জনগণের কাছে। আবারও হুঁশিয়ার করে বলতে দিতে চাই, যদি আবার কেউ সেই এক এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে আবার একদলীয় শাসন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান, তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.