মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবতনের আহ্বান

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবতনের আহব্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, এসএমইখাতে অপযাপ্ত ঋণ প্রবাহ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দীঘসূত্রিতা, উচ্চ সুদ হার, ভ্যাট ও করের হার বৃদ্ধি এবং জটিল রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীর ব্যবসার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ীরা বিশেষকরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলোর আশু সমাধানে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারনের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত মতবিনিময় লালবাগের মীম কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন এসোসিয়েশনের নেতা এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

উক্ত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চীফ ইকোনোমিস্টস ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: সেলিম আল মামুন, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মানস কুমার বর্মন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মোঃ জসীম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা, ব্যবসার আকার, প্রকৃতি ও সক্ষমতা অনুযায়ী করা ব্যবস্থার সহজীকরণ, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা নিরসন, বাস্তবভিত্তিক ভ্যাট হার নিধারণের উপর জোরারোপ করেন।

তিনি বলেন, শতবছর ধরে পুরোনো ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হলেও যানজট, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা এবং কর ও ভ্যাটের প্রতিবন্ধকতার কারণে এখানকার উদ্যোক্তাবৃন্দ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচেছন, যা নিরসনে সরকাররি-বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহায।

মো: সেলিম আল মামুন বলেন, ২০২২-২৪ পযন্ত স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্য ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণে ডলারের মূল্য অস্বাবাভিক হারে বেড়ে যায় এবং মুদ্রাব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, গত ৬মাসে আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গত ৭মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ বিলিয়ন মাকিন ডলার। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে টাস্কফোস গঠন করেছে।

মানস কুমার বর্মন বলেন, সরকার ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য ভ্যাট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা অটোমেটেড করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি হতে মুক্ত হবেন। তিনি রশিদ বিহীন ভ্যাটের টাকা না প্রদানের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ভ্যাট সবসময় নিধারিত হয়ে থাকে মূল্য সংযোজনের উপর।

মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন, পুরোনো ঢাকার যানজট নিরসনে ৮টি গুরুত্বপূণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে, তবে এদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও আসন্ন রমজান মাসে নগদ টাকা পরিবহনে ব্যবসায়ীদের পুলিশের সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করেন। যানজট নিরসনে পুরোনো ঢাকার বেশকিছু রাস্তা ওয়ানওয়ে করা হবে তিনি অভহিত করেন। কিশোর গ্যাংকে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে অভহিত করে তিনি বলেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে এটি মোকবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।

আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই’র প্রাক্তন পরিচালক মনোয়ার হোসেন করের হার কমিয়ে করের আওতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন, সেই সাথে করের হার যৌক্তিকীকরণের উপর জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআই’র প্রাক্তন ঊধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম বলেন, অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিক্রি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, এমতাবস্থায় কর ও ভ্যাটের উচ্চ হার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে আমরা ক্রমশ ক্ষতির মুখোমুখী হচ্ছি।

ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপত মতিউর রহমান বলেন, বতমানের অথনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এলসি মাজিন নূন্যতম ৫০% হতে হ্রাস করা প্রয়োজন। এছাড়াও অথবছরের মাঝে এসআরও জারি করে শুল্কহার পরিবতন করলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে খাত ভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করা, ট্যাক্স-ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণ, যানজট নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন বিশেষকরে কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত নিয়ন্ত্রণ, আমদানি পযায়ে ট্যারিফ ভ্যালুর উপর শুল্ক আরোপ, ভ্যাট হার হ্রাস, বন্ড লাইসেন্স’র আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের অপব্যবহার বন্ধ করা, সরকারী ব্যয় হ্রাস এবং বন্দরের পণ্য খালাস প্রক্রিয়া অটোমেটেড ও সহজীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো: সালেম সোলায়মান, পরিচালনা পষদের সদস্যবৃন্দ এবং প্রাক্তন সভাপতিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআই’র সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশীপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.