গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা গেছে ৩৪ জনকে।

ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মামলা (মিস কেস) হয়েছে ১৬টি। এই মামলাগুলোতে আসামির সংখ্যা ১০৮। তবে একটি মামলারও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো ট্রাইব্যুনালে জমা হয়নি। এই ১৬ মামলা এখন প্রাক্‌-বিচার পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করলে এসব মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গণ-অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে এই ট্রাইব্যুনালে। যদিও এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় সূত্র বলছে, গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যা এবং আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩০০টির মতো অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ যাচাই–বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে ১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা হয়েছে গুমের ঘটনায়। বাকি ১৩টি মামলা হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়।

১৬ মামলার মধ্যে ২টিতে আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তাঁর বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ (একটি মামলায়) আনা হয়েছে। এ মামলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা হয়েছে গুমের অভিযোগে। সেই মামলার শুনানি ১২ ফেব্রুয়ারি।

এখন পর্যন্ত একটি মামলাতেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত বিস্তৃত ও জটিল বিষয়। এই অপরাধ দেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে। ফলে মামলার সাক্ষী ও তথ্য-উপাত্ত বিপুল। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসংগত সময় প্রয়োজন। বেশি তাড়াহুড়ো করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ত্রুটি থাকতে পারে, এতে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেশবাসীর উচিত হতাশ না হয়ে যুক্তিসংগত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। চলতি মাসের শেষ দিকে কিংবা মার্চের শুরুর দিকে দু-তিনটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তবে বিচারপ্রক্রিয়া যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যরা। যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, বিচার হবে বলে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, দমিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বিচারে তেমন অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে, আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। বিচারের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে খুব শিগগির তাঁরা রাজপথে নামবেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলাতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ভারতে অবস্থান করা হাসিনাকে গ্রেপ্তারের জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড অ্যালার্ট জারি করতে অনুরোধ জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। পাশাপাশি তাঁকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের মামলায় যে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৪ জন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।

তাঁরা হলেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ফারুক খান, শাজাহান খান, আব্দুর রাজ্জাক, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামরুল ইসলাম, জুনাইদ আহ্‌মেদ ও কামাল আহমেদ মজুমদার।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক সদস্য ১৮ জন। তাঁরা হলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, জিয়াউল আহসান, মহিউদ্দিন ফারুকী, জসিম উদ্দিন মোল্লা, আবদুল্লাহিল কাফী, মইনুল ইসলাম, আলেপ উদ্দিন, মো. শাহিদুল ইসলাম, তানজিল আহমেদ, আবুল হাসান, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আরাফাত হোসেন, মোহাম্মদ আরশাদ হোসেন, চঞ্চল চন্দ্র সরকার, মোহাম্মদ সুজন হোসেন, মুকুল চোকদার, হোসেন আলী ও আকরাম।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.