গাজা উপত্যকায় কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা হালনাগাদ করেছে। নিখোঁজ ফিলিস্তিনিদের মৃত হিসেবে গণনা করার পর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৭০৯।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কাতার ভিত্তিক সংবদা মাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।
গাজা সরকারি তথ্য অফিসের প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতদের ৭৬ শতাংশের মরদেহ উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো অন্তত ১৪ হাজার ২২২ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে কিংবা এমন এলাকায় আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে উদ্ধারকারীরা পৌঁছতে পারেননি।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সালামা মারুফ জানান, নিহতদের মধ্যে ১৭ হাজার ৮৮১টি শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে ২১৪টি নবজাতক।
এ ছাড়া হামলায় এক লাখ ১১ হাজার ৫৮৮ জন আহত হয়েছে জানিয়ে মারুফ বলেন, ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, যাদের কেউ কেউ ২৫ বারের বেশি স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা চরম মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, যেখানে মৌলিক পরিষেবারও অভাব।
এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান এমন এক সময় এলো, যখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি গাজায় অন্তত ১৫ মাস ধরে চলা গণহত্যা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এই যুদ্ধবিরতি অন্তত মার্চের শুরু পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারীদের এমন কিছু এলাকায় পৌঁছনোর সুযোগ তৈরি হয়েছে, যেখানে আগে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
অনেক ফিলিস্তিনির জন্য উত্তরাঞ্চলীয় শহরে ফেরার প্রধান পথ হয়ে ওঠা গাজার আল-রাশিদ স্ট্রিট থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজম জানিয়েছেন, ‘মানবিক ও চিকিৎসাদল এখন উদ্ধার অভিযান থেকে মরদেহ উদ্ধার অভিযানে পরিবর্তিত হয়েছে। শত শত বাড়ি এখন কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।’
মারুফ আরো জানান, ইসরায়েলের হামলায় গাজার স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা ও সংবাদকর্মীদের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত এক হাজার ১৫৫ জন চিকিৎসাকর্মী, ২০৫ জন সাংবাদিক ও ১৯৪ জন বেসামরিক সুরক্ষা কর্মী রয়েছেন।
মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র সোমবার এই আলোচনা শুরু করবে। তবে তারা যদি ইসরায়েল ও হামাসকে কোনো চুক্তিতে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মার্চেই যুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে আছেন এবং তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করছেন। তিনি কট্টর ডানপন্থী মিত্রদের চাপে রয়েছেন, যারা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।
অন্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ও ট্রাম্প ‘হামাসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন, সব জিম্মিকে মুক্ত করা ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক মোকাবেলা’ নিয়ে আলোচনা করবেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.