জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে: শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা পত্রপত্রিকায় নারী নিগৃহীত হওয়ার খবর দেখি। সমাজে নারী নিগৃহীত হওয়ার সব খবর প্রকাশ হয় না। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জয়পুরহাট সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে দেশের বাইরে পাচার করেছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি করছেন।

সমাবেশে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমাদের সবার একটাই পরিচয়, সেটি হলো আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। যদি মসজিদ পাহারা দিতে না হয়, তাহলে মন্দির পাহারা দিতে হবে কেন? আমরা এটা চাই না। যে যার ধর্ম পালন করবে। কোনো বাধা থাকবে না। গত ৫ আগস্টের পর জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী কারও সম্পদ লুণ্ঠন করেনি। কারও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেনি। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। অনেকেই দেশ পরিচালনার ক্ষমতা পেয়ে নিজেকে দেশের মালিক মনে করতেন। যদি কোনো দিন আল্লাহর রহমতে জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার ক্ষমতা পায়, তখন আমরা দেশের মালিক হব না। আমরা দেশের সম্পদের পাহারাদার হব। আমাদের হাতে কারও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, লুণ্ঠনও হয়নি। আমরা কারও কাছ থেকে চাঁদা চাইনি, চাইবোও না; ইনশাআল্লাহ।

শফিকুর রহমান বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) এক মাসের ভেতরে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষকে খুন করলেন। ছাত্র-জনতা এজন্য জীবন দেয় নাই যে, যেন-তেনভাবে ক্ষমতায় বসে যাব। তারা জীবন দিয়েছে একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে। একটা মানবিক বাংলাদেশ তারা দেখতে চায়। একটা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। এই দেশে আবার দুঃশাসন ফিরে না আসুক, তা তারা দেখতে চায়। তাই যদি করতে হয় তাহলে অর্থবহ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে জাতিকে। আর সেই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার সাধন করতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামী ৫ তারিখেই বলে দিয়েছে- এই সরকারকে আমরা যৌতিক সময় দিতে চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের জন্য। তাড়াহুড়ো করে আমরা নিজেরাও ক্ষমতায় যেতে চাই না। কেউ তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতায় যাক, সেটিও আমরা চাই না।

তিনি আরও বলেন, যারা নির্বাচনের আগে জাতিকে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন, অনেক ইশতেহার দিয়েছেন। নির্বাচনের পর সব তারা ভুলে গিয়েছেন। জাতিকে দেওয়া ওয়াদা বাস্তাবায়নে তারা আগ্রহী ছিলেন না। আবার অনেকেই প্রতিপক্ষ দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আপনি তো দেশ গঠন করবেন, আপনি দমনে ব্যস্ত হলেন কেন? দেশ গঠন হলে তো এমনি যার যেটা পাওনা বিচারের মাধ্যমে সেটা পাবে। নির্বিশেষ সমস্ত মানুষ উপকৃত হবে। এর কারণ দুটি, যারা ক্ষমতায় গিয়েছেন তারা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করতেন না। আদালতে, আখেরাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের দায়িত্বের জন্য, কর্তব্যের জন্য তাদের জবাব দিতে হবে। এই বিশ্বাস তাদের ছিল না। যদি থাকতো তাহলে তারা আল্লাহকে ভয় করে তারা চলতেন, তাদের হাতে জনগণের জীবন, সম্পদ, ইজ্জত সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতো। তারা জনগণকে বোকা মনে করে রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে কবুল করেছে। ক্ষুধার্ত হয়ে বসে থাকেন, কখন ক্ষমতায় যাব। আর পেট ভরে খাইতে খাইতে বদ হজমে পর্যন্ত পৌঁছাবে। বদ হজম হলো ক্ষমতা যখন চলে যায়, তখন পেটে চাপ দিলে সব মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। হচ্ছে না? অতীতে হয়নি? হচ্ছে, হয়েছে এবং হবে। এই পথে যারাই হাঁটবেন বেইজ্জতি তাদের কপালে অনিবার্য। অসম্মান-অপদস্থ তাদের থাকবেই। মানুষ কেন টাকা-সম্পদের গোলাম হবে? মানুষ তো আল্লাহর গোলাম হবে। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে। সে যে ধর্মের হোক, ধর্ম দেখবে না। দেখবে তিনিও আমার মতো একজন মানুষ। আমার উচিত তাকে সম্মান করা, ভালোবাসা।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.