ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে সোমবার থেকে চালু হচ্ছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি)। এই আইন অনুযায়ী বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মাবলম্বী এক নিয়মে বাঁধা পড়বেন। শুধু রাজ্যের তফসিলভুক্ত উপজাতিরা এই আওতার বাইরে থাকবেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।
পূর্বতন জন সংঘ ও অধুনা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জন্মলগ্ন থেকে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। জম্মু–কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম জন্মভূমি মন্দির তৈরি ও সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা। প্রথম দুই লক্ষ্য পূরণ হলেও বিজেপি সরকার সারা দেশে ইউসিসি এখনো চালু করতে পারেনি। পশ্চিম ভারতের গোয়ার পর এবার উত্তর ভারতের উত্তরাখন্ডেও এই আইন চালু হতে যাচ্ছে। পর্তুগিজ শাসনকাল থেকেই গোয়ায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু রয়েছে।
উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই আইন চালু করা প্রসঙ্গে পিটিআইকে বলেছেন, দেশকে এক উন্নত, সংগঠিত, সম্প্রীতিপূর্ণ স্বনির্ভর জাতি গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ইউসিসি সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে এটি ছিল দলের অন্যতম প্রতিশ্রুতি।
সেই বছর উপর্যুপরি দ্বিতীয়বারের মতো রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে রাজ্যে ইউসিসি চালু করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত সেই কমিটি দেড় বছর পর এক খসড়া সরকারের কাছে পেশ করে। সেই খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভায় পাস করা হয় ইউসিসি বিল।
গত বছরের মার্চ মাসেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলে সম্মতি দেন। আইন পাস হওয়ার পর রাজ্যের সাবেক মুখ্যসচিব শত্রুঘ্ন সিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত এক কমিটিকে নতুন আইনের বিধি ও বিধানমালা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই কমিটি গত বছরের শেষে সরকারের কাছে তা জমা দেয়। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের পরদিন থেকে তা কার্যকর হবে।
এ আইনে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার, উত্তরাধিকার, দত্তক গ্রহণের মতো বিষয় ছাড়াও ‘লিভ ইন’ সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হবে। বলা হয়েছে, সব লিভ ইন সম্পর্ক বাধ্যতামূলকভাবে নথিবদ্ধ করতে হবে। তা ছাড়া ২১ বছরের কম বয়সীরা ওই সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চাইলে তাঁদের মা–বাবার সম্মতি প্রয়োজন।
রাজ্যের কোনো অধিবাসী রাজ্যের বাইরে এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে তাঁদের ক্ষেত্রেও এ আইন প্রযোজ্য হবে। অন্যথায় এবং মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি হবে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার রুপি জরিমানা। সম্পর্ক স্থাপনের পর এক মাসের মধ্যে নথিভুক্ত করা না হলেও কারাগারে যেতে হবে। সঙ্গে ১০ হাজার রুপি জরিমানা। লিভ ইন সম্পর্কে থাকার সময় সন্তানের জন্ম হলে তা বৈধ গণ্য হবে। সেই সন্তানও উত্তরাধিকার সূত্রে মা–বাবার সম্পত্তি পেতে পারবে।
এ আইনে সব ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রে বিয়ে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। ছেলে বা মেয়ে দুজনের বিয়ের বয়সই ধার্য করা হয়েছে ২১ বছর। এটা করা হয়েছে যাতে পাত্র ও পাত্রী দুজনই বিয়ের আগে শিক্ষা শেষ করতে পারে। এ আইনে বহুবিবাহ, শিশুবিবাহ এবং তিন তালাক দিয়ে ডিভোর্স নিষিদ্ধ হচ্ছে। মুসলমান সমাজে প্রচলিত ‘হালালা’ প্রথা ও রীতি ইউসিসিতে নিষিদ্ধ হচ্ছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.