ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে: জামায়াতের আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা এই কর্মী সম্মেলন থেকে দেশবাসীকে বলতে চাই, যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের হাতে এ দেশের মানুষ নিরাপদ। এ দেশের সম্পদ নিরাপদ। ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে এবং আমরা যেন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিই।’

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের কুড়িগ্রাম জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কড়া সমালোচনা করে জামায়াতের আমির বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের জন্য দুর্ভিক্ষ ছাড়া আর কী উপহার দিতে পেরেছে? একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া বাসন্তীকে জাল পরিয়ে এ দেশের ইজ্জত বহির্বিশ্বে নষ্ট করেছে। গত ১৬ বছরে তারা এ দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ এ দেশের মালিক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। এ দেশে কেউ মেজরিটি আর কেউ মাইনরিটি নয়। সবাই সমান। সব ধর্মের মানুষ সমান। গত ৫৩ বছরের ইতিহাস দেখেন, কারা সংখ্যালঘুদের জমি দখল করেছে। কারা তাঁদের ভিটেমাটিতে আগুন দিয়ে তাঁদের উচ্ছেদ করেছে। এই ইতিহাস সবাইকে জানাতে হবে।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল, তারা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এক দিনেই তাদের পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীকে খুন করা হবে। জামায়াত নাকি এই খুন করবে। কিন্তু গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে কোথাও কোনো খুনের ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ খুনি হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ খুনি নয়। বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমিক।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিডিআর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধে ভারতীয় বাহিনীর পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে পিলখানার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে করতে পারেনি। এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটির বিচার হবে। খুনিদের কোনো মাফ নেই। বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে যত মানুষকে খুন করা হয়েছে, তার প্রতিটির বিচার চাই।’

দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় মামলা–বাণিজ্য, তদবির–বাণিজ্য ঘটনার কথা শোনা যায়। যারা এই কাজগুলো করে, তারা এ দেশের মানুষের শত্রু। তারা ২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। আমাদের জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়—এমন কাজ আমরা করব না। ন্যায়ের পাশে, ইনসাফের পাশে আমরা যত দিন আছি, তত দিন আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলবে।’

জেলা জামায়াতের আমির আবদুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন। কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল বিকেল ও আজ ফজরের নামাজের পর থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে কলেজ মাঠ লোকজনে ভরে যায়। পরে সেখানে জায়গা না পেয়ে অনেকে কুড়িগ্রাম মারকাজ মসজিদ, জজকোর্ট ও কলেজ মোড়ের বিভিন্ন মাঠে থেকে জামায়াতের আমিরের বক্তব্য শোনেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.