পাঁচ মাসে ঘরের ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরেছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগে দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা ফিরে পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা টাকার পরিমাণ ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। সদ্য সমাপ্ত বছরের জুলাই-নভেম্বরে ঘরের ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসের শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা কমেছে ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েকটি ব্যাংকে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এতে পুরো ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই সংকট ধীরগতিতে হলেও দূর হচ্ছে। অর্থাৎ এ খাতের লুটপাট অনেকাংশে কমেছে। এজন্য মানুষ আবারও আস্থা ফিরে পাচ্ছে। তাই মানুষের হাতে থাকা অর্থ আবারও ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে।

গত ৫ আগস্টের পর দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে ঋণ বের হওয়া কমেছে। এর ফলে খাতটিতে আমানত প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত বছরের নভেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের একই মাসের তুলনায় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানত ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা।

গত বছরের আগস্টে আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ওই মাসে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ০২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করে। ওই মাসে আগের মাসের তুলনায় আমানত বাড়ে ১৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। অক্টোবর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৫৫ লাখ কোটি টাকা।

অন্যদিকে প্রবাসী আয় প্রবাহও বাড়ছে। রেমিট্যান্স দেশে এলে এর একটি অংশ ব্যাংকে জমা করেন প্রবাসীদের স্বজনরা। এতেও ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় নতুন এলসি খোলা হচ্ছে। এলসি খুলতে প্রয়োজনীয় ডলার কিনতে ব্যবসায়ীরা যে নগদ অর্থ জমা করছেন সেটিও এতদিন হাতে থাকা টাকা হিসেবে গণ্য ছিল। সব মিলিয়ে নানা উপায়ে হাতের টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে। এতে অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে।

গত ডিসেম্বর মাসে দেশে রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিলো। সদ্য সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশের প্রবাসীরা ২৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রেকর্ড গড়েছেন প্রবাসীরা। আলোচ্য এ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.