ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস।
শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বান দাস জানান, প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী সঞ্জয়ের অপরাধকে বিরল থেকে বিরলতম মনে হচ্ছে না বলে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ভারতে এখন একমাত্র বিরল থেকে বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রেই ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। বিচারক অনির্বান দাস বলেন, ‘আমার সামনে যে তথ্যপ্রমাণ রাখা হয়েছে, তাতে আমার এটাকে বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।’
এর পাশাপাশি তিনি জানান, রাজ্য সরকারকে নিহত নারী চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে নির্যাতে প্রাণ হারানো চিকিৎসকের বাবা-মা আদালতে বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা বিচার চাই।’
বিচারক তখন বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা ক্ষতিপূরণ চান না। কিন্তু আইনে যা আছে, আমাকে সেটাই করতে হবে। এখন ক্ষতিপূরপণের টাকা নিয়ে আপনারা কী করবেন সেটা আপনারাই ঠিক করবেন।’
বিচারকের এ বক্তব্যের পরও বাবা-মা সন্তান হত্যার সুবিচারের দাবিতে অটল থাকেন৷
সোমবার আদালতে বিচারক অনির্বান দাস সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে সঞ্জয় রায়ের শাস্তি নিয়ে তাদের মতামত জানতে চান। সিবিআইয়ের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, তারা মনে করছেন, এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা। তাই তারা সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড চান।
এরপর বিচারক সঞ্জয় রায়ের কাছে জানতে চান, তিনি শাস্তি নিয়ে কিছু বলতে চান কিনা৷ সঞ্জয় রায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে, তাই তিনি মনে করেন, কোনো অপরাধ না করা সত্ত্বেও তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।
বিচারক জানতে চান, সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে বাড়িতে কে আছে? জবাবে সঞ্জয় রায় জানান, মা আছে। বিচারক জানতে চান মায়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে কিনা। সঞ্জয় জানান, কোনো কথা হয়নি। এ সময় তিনি জানান, তিনি বাড়িতে থাকতেন না, পুলিশ ব্যারাকে থাকতেন।
এরপর শুনানি মুলতুবি করে বিচারক জানান, বেলা পৌনে তিনটের সময় তিনি রায় ঘোষণা করবেন। সেইমতো পৌনে তিনটের সময় বিচারপতি তার রায় ঘোষণা করেন।
সঞ্জয় রায়ের দিদি বলেছেন, বিচারক যা ঠিক মনে করেছেন, তা করেছেন। আমরা কোথাও আবেদন জানাবো না। তবে আমাদের অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। প্রথম থেকে বলা হচ্ছে, সঞ্জয় দোষী, কিন্তু একা এই কাজ কেউ করতে পারে না। আমাদের হাজারটা প্রশ্ন আছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি ফাঁসি চেয়েছিলাম। বিচারের রায় নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমি বলতে পারি, আমাদের হাতে কেসটা থাকলে আমরা কিন্তু ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিতাম। আমি বিস্তারিত জানি না। সিবিআই তদন্ত করেছে। আমাদের হাত থেকে ইচ্ছে করে তদন্ত কেড়ে নিয়েছে। আমরা চেয়েছি, বিচার হোক, চরমতম শাস্তি হোক। ফাঁসি হলে আমি শান্তি পেতাম।’
তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্বে থাকা দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজ্য তিনটি মামলায় ফাঁসি করাতে পেরেছে। কিন্তু সিবিআই এই মামলায় ফাঁসির শাস্তি করাতে পারলো না, এটা লজ্জার।
জুনিয়র চিকিৎসক সৌরভ রায় বলেছেন, ‘আমাদের দিদি ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করার পর কর্মস্থলে ধর্ষিতা ও খুন হয়েছেন। এমন জায়গায় হয়েছেন, যা বাড়ির মতো সুরক্ষিত। এরপরও এটা বিরল থেকে বিরলতম নয়? আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আশফাকুল্লা নাইয়ার জানিয়ে দেন, তারা এই রায় মানছেন না। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
এরপর যে কোনো পক্ষই হাইকোর্টে যেতে পারে। তারপর হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে যে কোনো পক্ষ। ফলে এখনো সামনে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলতে পারে।
গত বছরের ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হল থেকে এক নারী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। গত ৪ নভেম্বর মামলায় চার্জ গঠনের পরে ১১ নভেম্বর থেকে দীর্ঘ শুনানি চলে। গত ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। ডিডাব্লিউ, পার্সটুডে, পিটিআই, এএনআই



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.