ডিসেম্বর মাসে চীনের রপ্তানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে আমদানির গতিও বেড়েছে। বছরের শেষভাগে এসে এই বৃদ্ধির পেছনে অবশ্য কৌশলগত কারণ আছে। বিষয়টি হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার আগেই দ্রুততার সঙ্গে মজুত কমানোর চেষ্টা করছে চীনের কোম্পানিগুলো।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।
চীনের সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনের রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। নভেম্বর মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। খবর সিএনএন।
একই সঙ্গে ডিসেম্বরে চীনের আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশ। সিএনএন বলছে, এই পরিসংখ্যান বিস্ময়কর। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের পর এটাই আমদানির সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদের ধারণা করেছিলেন, গত মাসে আমদানি উল্টো ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের ১৮ ট্রিলিয়ন বা ১৮ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি রপ্তানি খাত। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। চীনের অর্থনীতি এখনো আবাসন খাতের সংকট ও ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণে ধুঁকছে।
চীন সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে দফায় দফায় প্রণোদনা দিচ্ছে। এসব প্রণোদনার ওপর ভর করে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে নীতিপ্রণেতারা আত্মবিশ্বাসী হলেও চীন নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প অঙ্গীকার পূরণে চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করলে ২০২৫ সালে চীন নতুন করে ধাক্কা খেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের বিবাদ। ইইউ চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়িতে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছিল, তা এখনো অমীমাংসিত। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়ে চীন যে বাজার মাত করার কথা ভাবছিল, তার সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যাহত হবে।
এদিকে আরেকটি বিষয়ের কারণে ডিসেম্বর মাসে চীনের রপ্তানি বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি হচ্ছে, ২৮ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নববর্ষ উদ্যাপিত হবে। সেই উৎসব ও ট্রাম্পের আগমন—এই দুই ঘটনার কারণে মজুত খালি করেছেন পণ্য উৎপাদকেরা।
আমদানি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কপার ও লৌহ আকরিকের মতো পণ্য বিপুল পরিমাণে কেনার যে নীতি চীন গ্রহণ করেছে, তার কারণে আমদানিতে গতি এসেছে; অর্থাৎ দেশটি কত দামে বেশি পরিমাণে এসব পণ্য কিনে মজুত রাখতে চায়।
ডিসেম্বর মাস শেষে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪৮০ কোটি ডলারে উঠেছে।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.