রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা চালু হয়েছিল। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার তা বিলুপ্তির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অর্থাৎ ৪৭ বছর পর পোষ্য কোটা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা, সহায়ক কর্মচারী সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন পরিবহন সমিতি মিলে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন, তার পরের দিন সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি এবং পরের দিন দিনব্যাপী পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরের দিন মিটিং করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিল হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পোষ্য কোটা রয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৫৩ সালে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পর, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য পোষ্য কোটা চালু করেন। এই কোটা সুবিধায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শুধুমাত্র পাস মার্ক পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানরা। শুরুতে ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল তাদের জন্য। কিন্তু পোষ্য কোটায় ভর্তিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছেন।

এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করেন। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত একমাস ধরে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।

তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নতুন প্রশাসন ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রথম দফায় পোষ্য কোটা ৩ শতাংশ নির্ধারণ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে লাগাতার নানা কর্মসূচি দেন। সর্বশেষ গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পোষ্য কোটা বাতিল করে শুধুমাত্র সহায়ক কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা ১ শতাংশ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেটাও প্রত্যাখান করে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরতরা।

এতে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে দুই উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ ২০০ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ১২ ঘণ্টার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের ঘোষণা দেন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.