বাদাম চাষী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

শত বছর বয়সে মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। পরবর্তী সময় এই চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব নেন।

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জিমি কার্টারকে ‘অসাধারণ নেতা’ আখ্যায়িত করে শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিমি কার্টারের দায়িত্ব পালন সুখকর ছিল না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কূটনৈতিক সংকট সামলাতে না পেরে এক মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি। পরে মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজের সুনাম পুনরুদ্ধার করেন জিমি কার্টার, যার স্বীকৃতি পান শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে।

কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট

জর্জিয়ার প্লেইনসে ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র। পরে তিনি জিমি কার্টার হিসেবেই পরিচিতি পান। একজন কৃষক ও দোকানির চার সন্তানের একজন ছিলেন তিনি।

কিশোর বয়স থেকেই সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট সানডে স্কুলের শিক্ষক ছিলেন জিমি কার্টার। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনেও শক্তিশালী নৈতিকতার চেতনা নিয়ে আসেন তিনি। কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়টি প্রকাশ করতেন জিমি কার্টার।

জিমি কার্টার একপর্যায়ে কোটিপতি হন। জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৪৬ সালে রোসালিন স্মিথকে বিয়ে করেন জিমি কার্টার। এই দম্পতির চার সন্তান। রোসালিনের সঙ্গে জিমি কার্টারের দাম্পত্য জীবন ছিল দীর্ঘ ৭৭ বছরের। গত বছরের নভেম্বরে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান রোসালিন। স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল অসুস্থ কার্টারকে। তাঁদের সংসারে ৪ সন্তান, ১১ নাতি-নাতনি এবং ১৪ জন প্রপৌত্র ও প্রপৌত্রী রয়েছে। ২০১৫ সালে তাঁদের এক নাতির মৃত্যু হয়।

জিমি কার্টার কয়েক বছর ধরে ত্বকের ক্যানসার মেলানোমাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর যকৃৎ ও মস্তিষ্কেও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো চিকিৎসা না নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পর থেকে নিজ বাসভবনে নিবিড় সেবাযত্নে ছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

গত ১ অক্টোবরে জিমি কার্টার তাঁর ১০০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেন। ই-মেইল যোগে আগাম ভোট দিয়েছিলেন তিনি।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.