জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৪২ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৩১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্প।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকর চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো: নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের “চিলমারী এলাকায় নদী বন্দর নির্মাণ (১ম সংশোধিত)” প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প “আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ” প্রকল্প ও “কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ” প্রকল্প; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের “অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন, পুনঃবাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন” প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প “ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন” প্রকল্প, “রশিদপুর-১১ নং কুপ (অনুসন্ধান কুপ) খনন” প্রকল্প ও “২ডি সাইসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ এন্ড ৯” প্রকল্প, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন” প্রকল্প এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প “বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৪র্থ সংশোধিত)” প্রকল্প ও “বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)” প্রকল্প।
এছাড়া, পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত ০৬টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেকের সদস্যদের অবহিত করা হয়।
তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (১ম পর্যায়) প্রকল্পটি বাতিলের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং প্রকল্পটি বাতিল করার জন্য অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
একনেক সভা শেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা দেখেছি মানুষের জন্য অনেক ভালো প্রকল্পগুলো ফেলে রাখা হয়। আর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গুলো গ্রহণ করা হয়। আমাদের দেশে অনেক ঘন বসতি ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। এখন প্রকল্প প্রনয়নের সময় এমনভাবে প্রনয়ন করা হবে যাতে তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়।
সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রকল্প যতভালো করেই তৈরি করা হোক, তা স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা না বলে করা হলে তার স্থায়ীত্ব থাকে না। জনগণ যেটার সাথে সম্পৃক্ত না, তেমন প্রকল্প দেখতে ভালো লাগলেও তা কতটুকু জনবান্ধব তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশ্ব ব্যাংক বা এডিপির চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে স্থানীয় জনগণ খুব একটা উপকৃত নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান উত্তোলন এবং উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ তিনটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভোলা, সিলেটে অনেক গ্যাস মজুত আছে। আগের সরকার কেনো আমাদের গ্যাস থাকতেও সেগুলো অনুসন্ধান না করে, এলএনজি ও কয়লা আমদানির প্রতি ঝোক বেশি দিয়েছিল, সেটা এখন বড় প্রশ্ন। আমরা আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি মেনেই গ্যাস অনুসন্ধান এবং কূপ খননের কাজ করবো। যতটা পারি এ কাজ অব্যাহত রাখা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতে আমরা কোনো নিয়ম ভাঙতে চাই না। তবে গ্যাস উত্তোলনে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা অহেতুক প্রকল্প বাতিলের কাজ করছি। আমরা বাজেট ঘাটতি সহনীয় রেখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনের কাজ করছি। এতে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছোট হলেও প্রবৃদ্ধি কমবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জনগণের উপকার করা।
তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেট নিয়ে আমাদের ওপর সমন্বয় করার দায়িত্ব পড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে না, কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে, বিদেশী লেনদেনের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসছে। মূল্যস্ফীতি কমার জন্য নানা প্রকার কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, যে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গুলো নেওয়া হয়েছিল তা নিয়েই আমরা ব্যস্ত ছিলাম, এখন সময় এসেছে অন্যান্য সকল কাজ করার। আগের চেয়ে এখন কাজের গতি বাড়বে।
এদিকে, অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ; পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন; শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.