৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ কেন চান, ব্যাখ্যা নারায়ণ মূর্তির

মূর্তি আরো বলেন, বিশ্ববাসী সম্মান দেয় পারফরম্যান্স দেখে, পারফরম্যান্স থেকে স্বীকৃতি আসে, স্বীকৃতি থেকে সম্মান আসে এবং সম্মান থেকে আসে ক্ষমতা। আমি তরুণদের বলতে চাই, আমাদের ওপর বড় একটি দায়িত্ব রয়েছে। এজন্যই আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে।

ভারতের আইটি কোম্পানি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি তার ৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহের মন্তব্যের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তরুণদের উপলব্ধি করতে হবে যে, ভারতকে এক নম্বর করার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। খবর এনডিটিভি।

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আরপিএসজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে কথা বলার সময় মূর্তি বলেন, ইনফোসিসে আমি বলেছিলাম যে, আমরা সেরা হতে চাই এবং নিজেদের তুলনা করতে চাই বিশ্বের সেরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে। বিশ্বমানের সেরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করলে আমরা বলতে পারব যে, আমাদের ভারতীয়দের অনেক কিছু করা বাকি। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে কারণ ৮০০ মিলিয়ন ভারতীয় বিনামূল্যে রেশন পায়। তার মানে, ৮০০ মিলিয়ন ভারতীয় দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। যদি আমরা কঠোর পরিশ্রম করতে না পারি, তাহলে আর কে করবে?

প্রথম জীবনে তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রেরণার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি ৭০-এর দশকের গোড়ায় প্যারিসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। পশ্চিমে সবাই ভারতকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও নোংরা বলে ভাবত। আমার দেশে দারিদ্র্য ছিল, রাস্তাগুলোয় ছিল গর্ত। অন্যদিকে, সেখানে (পশ্চিমে) সবাই ছিল মোটামুটি সচ্ছল। ট্রেন ঠিক সময়ে চলত।

নারায়ণ মূর্তি বলেন, আমি উপলব্ধি করলাম— একটি দেশ কেবল তখনই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে পারে যখন সে কর্মসংস্থান তৈরি করবে, যা মানুষের হাতে অতিরিক্ত আয় এনে দেবে। সরকার কখনোই উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারে না। আমি আরো উপলব্ধি করলাম, উদ্যোক্তারা একটি দেশ গড়ে তোলে কারণ তারা চাকরি তৈরি করে, বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্পদ তৈরি করে এবং তারা কর দেয়। সুতরাং, একটি দেশ যদি পুঁজিবাদকে গ্রহণ করে, তাহলে তা ভালো রাস্তা, ভালো ট্রেন এবং ভালো অবকাঠামোর পথ সুগম করবে। ভারতের মতো দরিদ্র দেশে তখনও পুঁজিবাদ শেকড় গাড়েনি। আমি উপলব্ধি করলাম, আমাকে দেশে ফিরে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে হলে ‘সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদ’ গ্রহণ করতে হবে।

নারায়ণ মূর্তি সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি বলেন, সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদকে গ্রহণ করুন। এটি এমন একটি পুঁজিবাদ, যা উদারতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের সেরা দিকগুলোকে বেছে নিয়ে একত্রিত করে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশ একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে স্থিতিশীলভাবে দাঁড়াতে পারবে।

মূর্তি আরো বলেন, বিশ্ববাসী সম্মান দেয় পারফরম্যান্স দেখে, পারফরম্যান্স থেকে স্বীকৃতি আসে, স্বীকৃতি থেকে সম্মান আসে এবং সম্মান থেকে আসে ক্ষমতা। আমি তরুণদের বলতে চাই, আমাদের ওপর বড় একটি দায়িত্ব রয়েছে। এজন্যই আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

উপস্থিতদের উদ্দেশে নারায়ণ মূর্তি বলেন, এখানে একজন ভদ্রলোক আমাকে বলেছিলেন যে, একজন চীনা শ্রমিক একজন ভারতীয় শ্রমিকের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বেশি উৎপাদনশীল। আমরা খুব সহজেই অপ্রয়োজনীয় কথা বলে সময় নষ্ট করে নোংরা, দরিদ্র এবং সারা বিশ্বের কাছে অবহেলিতই থেকে যেতে পারি। তাই আমি মনে করি না যে, আমরা তেমনটাই থেকে যাবো আর বলব, আমি অফিসে যাব না। আমার অনুরোধ হলো, এখানকার সবাই নিজেদের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করে দেশের জন্য কাজ করুন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.