জার্মানির অর্থনীতি চলতি বছর সংকুচিত হবে। আগামী বছরও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির চাকা তেমন গতিশীল হবে না, খুব সামান্যই প্রবৃদ্ধি হবে। তাছাড়া জাতীয় উৎপাদন এ বছর দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুন্দেসব্যাংকের নতুন পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। যদিও গত জুনে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল ব্যাংকটি।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ইউরোপ ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইউরোনিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৫ সালে উৎপাদন মাত্র দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা আগের ১ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম। ২০২৬ ও ২০২৭ সালের জন্য বুন্দেসব্যাংক যথাক্রমে দশমিক ৮ ও দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
উচ্চ ঋণের খরচে বিশ্বের অনেক দেশ সমস্যায় পড়লেও জার্মানির অর্থনীতি বিশেষভাবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় রুশ জ্বালানিনির্ভর দেশটির অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বয়স্ক জনসংখ্যা, জরাজীর্ণ অবকাঠামো ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় জার্মান অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছে না।
চীনের অর্থনৈতিক স্থবিরতাও চলতি বছর জার্মানির প্রবৃদ্ধিতে বড় আঘাত হেনেছে। কারণ দেশটির বাজার জার্মান রফতানির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। গত শুক্রবার প্রকাশিত ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে জার্মানির বৈশ্বিক রফতানি আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এ সময় চীনে রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ দশমিক ২ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় দশমিক ৭ শতাংশ রফতানি কমেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা জার্মানির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। দেশটিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আকস্মিক নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত মাসে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বাজেট নিয়ে বিরোধের কারণে তার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেন। ফলে ক্ষমতাসীন”‘ট্রাফিক লাইট’ জোট ভেঙে পড়ে।
বুন্দেসব্যাংক সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা জার্মানির জন্য আরো বিপদ বয়ে আনতে পারে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এটি বাস্তবায়ন হলে ২০২৭ সালের জন্য জার্মানির জিডিপি পূর্বাভাস ভিত্তি অবস্থার তুলনায় ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। পূর্বাভাস অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ও চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে জার্মান অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বুন্দেসব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক চাহিদা কমে গেলে জার্মানির রফতানিনির্ভর অর্থনীতি বড় আকারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি অনিশ্চয়তা বাড়লে জার্মান অর্থনীতি আরো চাপে পড়বে।
এদিকে মুদ্রাস্ফীতি আগামী বছর সামান্য কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বুন্দেসব্যাংক। এ সময় মূল্যস্ফীতি বার্ষিক গড় ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৪ শতাংশে নামতে পারে। খাদ্যদ্রব্যের সাময়িক মূল্যবৃদ্ধি ও সেবার ওপর ধীরে ধীরে কমতে থাকা মূল্যচাপের কারণে এ পরিবর্তন ঘটতে পারে। ২০২৬ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে ২ শতাংশে ফিরে আসবে বলে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি পূর্বাভাস দিয়েছে।
অর্থসূচক/
 
			
 
						

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.