প্রতিযোগিতা ছাড়া জ্বালানিখাতে আর কোনো দরপত্র নয়: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা ও গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া জ্বালানিখাতে আর এখন থেকে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অনুমেয় জ্বালানি মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা ও গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা ২০১০ সালের কালো আইন বাতিল করে এখাতে প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে এনেছি। জ্বালানি খাতে বছরে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু ভর্তুকির এ হার প্রায় ৩ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, তেল আমদানিতে উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া গেছে। এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপির পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। সরকারি কিছু সংস্থা যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে, যেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করা হবে।

ফাওজুল কবির খান বলেন আমাদের ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস প্রয়োজন, আমাদের রয়েছে ৩ হাজারের কম। ঘাটতি মেটাতে নিজেদের গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ভোলায় প্রায় ৭০ সিএমএফএফটি গ্যাস মজুত রয়েছে, যা উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো দরপত্র আহ্বান করা হবে না।

বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র আইপিপি থেকে সরকার সরে আসছে উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, মার্চেন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে ব্যবসায়ীরা নিজেদের নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দামটা জানিয়ে দেবে তারা। এসব কেন্দ্র থেকে ১০-২০ শতাংশ সরকার কিনে নিতে পারে।

ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাসের অভাব নেই; বরং সম্ভাবনা অনেক। তাই জ্বালানির জন্য হাহাকারের কোনো অর্থ হয় না। দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অনুসন্ধান করা হয়নি। আমদানির দিকে ঝোঁক বেশি। এই দেশে গ্যাস না থাকাটাই অস্বাভাবিক। তাই বাংলাদেশে জ্বালানি–সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমদানি না করে বরং গ্যাস রপ্তানির দিকে যেতে পারে বাংলাদেশ।

সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম। তিনি বলেন, জ্বালানি–সংকট উত্তরণের পথ হলো দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানো। আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের যে অবস্থা, তাতে আগামী পাঁচ বছর বর্তমান হারে উৎপাদন ধরে রাখা কঠিন।

অধ্যাপক তামিম আরও বলেন, নবায়ানযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের গৃহস্থালির ছাদ ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ২০২০-২১ অর্থবছরের পর টাকার অবমূল্যায়ন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি সিস্টেম লসের কারণে কমপক্ষে ৫ শতাংশ গ্যাস নষ্ট হচ্ছে, যা ১৩০ এমএমসিএফডির সমতুল্য।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর থেকে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর হয়ে উঠেছে। এখন জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিগত দুই দশকে আমাদের জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ৪ গুণ বেড়ে ৪৫ মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (টিওই) পৌঁছে গেছে। শিল্পখাতে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি বিকল্প নেই।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.