দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়েওলের বিরুদ্ধে বুধবার ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন প্রস্তাব এনেছেন দেশটির জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় সদস্যরা৷ দেশটিতে সামরিক আইন জারি এবং ছয় ঘণ্টা পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর এই প্রস্তাব আনা হয়৷
মঙ্গলবার গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়েওল৷ উত্তর কোরিয়া ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির’ হুমকির কারণ দেখিয়ে এই আইন জারির কথা জানিয়েছিলেন তিনি৷
তবে প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ বিক্ষোভ শুরু হয়৷ এই অবস্থার মধ্যে সামরিক আইন বাস্তবায়ন করতে ২৮০-র বেশি সেনা ২৪টি হেলিকপ্টার নিয়ে সংসদ এলাকায় প্রবেশ করেন৷ কিন্তু ১৯০ জন সাংসদ সেনাদের বাধা উপেক্ষা করে সংসদে প্রবেশ করেন এবং প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ এরপর সংবিধান মেনে সামরিক আইন তুলে নিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ইয়েওল৷
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ৩০০৷ এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার এর সদস্য সংখ্যা ১০৮৷ আর বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য সংখ্যা ১৭০৷ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বুধবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার বিষয়টি জানিয়েছে৷ এই বিষয়ে কখন ভোট অনুষ্ঠিত হবে তা এখনও জানা না গেলেও শুক্রবার বা শনিবার সেটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাসের জন্য ৩০০ সদস্যের মধ্যে অন্তত ২০০ সদস্যকে এর পক্ষে ভোট দিতে হবে৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ১৭০ সদস্যসহ অন্যান্য বিরোধী দল মিলিয়ে প্রায় ১৯০ সদস্য রয়েছেন৷ তাই প্রস্তাব পাস হতে হলে প্রেসিডেন্টের দলের কয়েক সদস্যেরও ভোট প্রয়োজন হবে৷ ইয়েওলের দল পিপল পাওয়ার সামরিক আইন জারির বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের দায়ী করারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি৷
প্রেসিডেন্ট ইয়েওলের কার্যালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷ এদিকে, ইয়েওল পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন জোট ‘কোরিয়ান কনফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন’৷
আগামী বছরের বাজেটকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্টের দল ও বিরোধীদের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা গেছে৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিরুদ্ধে সরকার হটানোর পরিকল্পনার অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়েওল৷
এ ছাড়া, দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ফার্স্ট লেডি কিম কেওন হিকে ঘিরে বিভিন্ন বিতর্কের কারণে প্রেসিডেন্টের নিজের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে৷ গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, ইয়েওলের প্রতি মাত্র ১৯ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে৷ ২০২২ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইয়েওল৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এএফপি, রয়টার্স
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.