হায়াত তাহিরির আল-শাম, সংক্ষেপে এইচটিএস। এই সংগঠনই গত এক সপ্তাহ ধরে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সংগঠন। তবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এইচটিএস। গত শুক্রবার তারা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নিয়েছে। আশপাশের একাধিক গ্রামও এখন তাদের দখলে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হামা শহরটি দখলে নেওয়া।
সিরিয়ারযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নানার হাওয়াচ। কীভাবে গৃহযুদ্ধ শেষ করা যায়, তা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। ডিডাব্লিউকে নানার জানিয়েছেন, রোববার হামা শহরে বাশার আসাদের সরকার বিরাট সেনা বাহিনী পাঠিয়েছে। এইচটিএস-কে তারা চাপ দিয়ে উত্তরের দিকে খানিকটা সরিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু নানারের আশঙ্কা, এইচটিএস এতে থামবে না। আগামী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে আবার গোটা সিরিয়াজুড়ে প্রবল গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন এই গবেষক। তার বক্তব্য, এইচটিএস-এর পিছনে যেহেতু তুরস্কের হাত আছে, তারা যথেষ্ট শক্তি নিয়েই আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
এর আগেও হামা গৃহযুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলি সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল। প্রাথমিকভাবে তারা খানিকটা অগ্রসরও হতে পেরেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে হামায় আসাদ সরকার বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করে। শুরু হয় প্রবল গৃহযুদ্ধ। আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে সমর্থ হয়। সে সময় আসাদ সরকারকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছিল ইরান এবং রাশিয়া। তারা এখনো আসাদ সরকারের বন্ধু।
একসময় আল কায়দার অংশ ছিল এইচটিএস। পরবর্তীকালে তারা আলাদা হয়ে যায়। সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বিশেষ করে ইদলিব এলাকা এখন এইচটিএস-এর দখলে। প্রায় ৪০ লাখ উদ্বাস্তু সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইদলিবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কেবল এইচটিএস লড়ছে না। তুরস্কের ছত্রছায়ায় থাকা সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এসএনএ-এর একটি অংশও লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দ অধ্যুষিত অঞ্চলে তারা আক্রমণ চালাচ্ছে।
তুরস্ক বরাবরই আসাদ সরকারের বিরোধী। সিরিয়ার সঙ্গে তাদের বিরাট সীমান্ত। তবে আসাদ সরকারের পাশাপাশি কুর্দ যোদ্ধাদেরও তুরস্ক জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে। এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে তুরস্ক।
রাশিয়া বরাবরই আসাদ সরকারের বন্ধু। এই বন্ধুত্বের অন্যতম কারণ কৌশলগত সুবিধা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া কিছুটা সমস্যায় থাকলেও সিরিয়ার কৌশলগত অবস্থান তারা ছাড়বে না। বস্তুত, সিরিয়ায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের আবহ তৈরি হওয়ার পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ‘সিরিয়া বরাবরই আমাদের সহযোগী। এক্ষেত্রেও আসাদ সরকারকে আমরা সবরকম সাহায্য করব। সিরিয়ায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’
ইরানের সরকারও আসাদ সরকারের সমর্থক। ‘অ্যাক্সিস অফ রেসিসটেন্স’এর অংশ আসাদ সরকার। এই গোষ্ঠী মনে করে আমেরিকা এবং ইসরায়েল তাদের প্রধান শত্রু। এই গোষ্ঠীর অংশ ইরান, লেবানন-সহ একাধিক দেশ এবং বেশ কিছু গোষ্ঠী যেমন হুতি।
সিরিয়ার কিছু গোষ্ঠী দাবি করেছে, সোমবার ইরান থেকে প্রায় ২০০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি পিক আপ ট্রাকে করে সিরিয়ায় ঢুকেছে। আলেপ্পোর কাছে সিরিয়ার সেনাকে সহায়তা করবে তারা।
সব মিলিয়ে এক নতুন গৃহযুদ্ধএর মুখোমুখি সিরিয়া। বস্তুত, ২০১১ সাল থেকে টানা গৃহযুদ্ধএর কারণে কার্যত ধসে গেছে দেশটির অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা। তার উপর আবার নতুন করে এই লড়াই আরো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেবে দেশটিকে। সূত্র: ডিডাব্লিউ
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.