‘খেলাপি ঋণ বেড়ে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে’

দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন সুশাসন না থাকায় এই খাতে যে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার চিত্র ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে। এরই অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের হার ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এসব ঋণের অধিকাংশই ২০১৭ সালের পর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এমন ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এখন যা সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে তা ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। এই খেলাপি আগেই হয়ে আছে। এখন হিসাবে তা আসবে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সামনে খেলাপি ঋণ যেটা দাঁড়াবে তার অর্ধেক বা আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে এস আলম, সাইফুজ্জামানসহ (সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী) বড় কয়েকটি গ্রুপ ও ব্যবসায়ীর। ২০১৭ সালের পরে এসব ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করা হয়।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তদারকি জোরদার করতে হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পরীক্ষা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করা হচ্ছে, যা ১১ ডিসেম্বর শুরু হবে। প্রথমে ১২টি ব্যাংক ও পরে ২০ ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এতে প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এরপর এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। আমরা অবশ্যই আমানতকারীদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেব। আমানতের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি এর মাধ্যমে গ্রাহক আস্থা ফিরে আসবে।

গর্ভনর আরও বলেন, ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইন করা হচ্ছে। পাচারের টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সব সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

উল্লেখ, বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম, বেক্সিমকোসহ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়েছেন। তারা নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। তারা নতুন নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণের কিস্তি দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল, বৃহৎ ঋণ পুনর্গঠনসহ নানা সুবিধা দিয়েছে খেলাপিদের। এ ধরনের কৃত্রিম ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়ালে থেকে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালায় পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধাভোগীরা আর নতুন করে ঋণ নিতে না পারায় পুরনো ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। এসব কারণে আগামীতে পর্যায়ক্রমে খেলাপি ঋণের হার বাড়বে এমন আশংকা করা হচ্ছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.