সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দখলে ৫০ শহর, সংঘর্ষে নিহত ২ শতাধিক

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় আকারের আক্রমণ শুরু করেছে বিদ্রোহীরা, দখল করে নিয়েছে আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের ৫০টি শহর ও গ্রাম। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ২৪০ জন নিহত হয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ ছাড়া সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর অর্ধেক দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। আজ দিনের শুরুতে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুল রহমান এ কথা জানান। সংগঠনটি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

রামি আবদুল রহমান বলেন, আলেপ্পো শহরের অর্ধেকই এখন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও এর মিত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে। কোনো ধরনের লড়াই এবং একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। সরকারি বাহিনী পিছু হটেছে।

রয়টার্সকে জানিয়েছে, আলেপ্পো বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শনিবারের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধী বিদ্রোহীরা শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে।

সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তারা বুধবার থেকে আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু শহর ও গ্রাম দখল করেছে।

২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে এই উত্তরাঞ্চলীয় শহরটি দখলে নিয়েছিল আসাদ ও তাঁর মিত্র রাশিয়া, ইরান ও আঞ্চলিক শিয়া মিলিশিয়ারা।

এদিকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সিরিয়ার পাশাপাশি রুশ বাহিনীর বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিদ্রোহীদের ঠেকাতে দামেস্ককে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আসাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাশিয়া। নতুন সামরিক সরঞ্জাম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিরিয়ায় পৌঁছে যাবে।

এসওএইচআর আরও জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমান বাহিনী আলেপ্পো অঞ্চলে ২৩টি বিমান হামলা চালিয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্রোহী ও সরকারপন্থি বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘর্ষে ২৫৫ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।

গাজা ও লেবাননের যুদ্ধ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন সংঘাতের প্ররোচনা দিচ্ছে বলে গত মাসে সতর্ক করেছিলেন সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন। আজ বিবিসিকে তিনি জানান, সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে বড়সড় আক্রমণ চালিয়েছে এইচটিএস। এর জবাবে রাশিয়া কয়েক মাস পর আবার বিমান হামলা শুরু করেছে সিরিয়ায়। আর সিরিয়ার সামরিক বাহিনী তাদের ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে।

এদিকে শুক্রবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ‘মিত্র সিরিয়া সরকার’-কে আলেপ্পোতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, সহিংসতার মাঝে আলেপ্পো থেকে প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী ইদলিবে আশ্রয় নিয়েছে।

২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের ওপর বাশার আল-আসাদ সরকারের সহিংস হামলার পর শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ২০২০ সালে, আসাদের প্রধান মিত্র রাষ্ট্র রাশিয়া ও তুরস্কর মধ্যস্থতায় ইদলিবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছিল সিরিয়া সরকার। এরপর সহিংসতা একরকম থেমে গেলেও মাঝেমধ্যে এ অঞ্চলে সংঘর্ষ, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.