মসজিদের স্থানে মন্দিরের দাবিকে ঘিরে পুলিশের গুলিতে ৩ মুসলিমসহ নিহিত ৫

ভারতের উত্তরপ্রদেশে মুঘল আমলের সামভাল শাহী জামে মসজিদকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মসজিদটি যেখানে নির্মিত, সেখানে আগে মন্দির ছিল, এমন দাবি করে আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর আদালত তাদের পিটিশনের ভিত্তিতে সেখানে জরিপ চালানোর নির্দেশ দেন। জরিপ চালাতে বাধা দেন সেখানকার মুসল্লিরা। এ সময় গুলি চালিয়ে নাঈম, বিলাল এবং নোমান নামের ৩ মুসলিমকে হত্যা করে পুলিশ এবং পরে হাসপাতালে আরো ২ জন নিহিত হয়।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডিডাব্লিউ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল রোববার সকালে মসজিদে জরিপ চালাতে যান একটি দল। পরে তাদের জরিপ চালাতে বাধা দেন সেখানকার মুসল্লিরা। এ সময় গুলি চালিয়ে নাঈম, বিলাল এবং নোমান নামের ৩ মুসলিমকে হত্যা করে পুলিশ। পরে হাসপাতালে আরো ২ জন নিহত হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্থানীয় পুলিশ বলছে, মুসল্লিরা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। পরে পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে।

স্থানীয় মিডিয়া বলছে, জরিপ চালাতে সকালের দিকে পুলিশের বড় দলসহ জরিপকারীরা মসজিদের কাছে জড়ো হয়। জরিপকারী দল মসজিদে কাজ শুরু করে দিলে স্থানীয় মুসলিমরা স্লোগান দিতে শুরু করে। এ সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী পাথর ছোড়ে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল অনেকে। পরে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) মামলা দায়ের করা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল, সরকার এবং প্রশাসন ‘নির্বাচনী অনিয়ম থেকে নজর ঘোরাতে’ সহিংসতা চালিয়েছে।

জেলা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত বিকেলে অনুষ্ঠিত মসজিদে নামাজে হস্তক্ষেপ এড়াতে সকালে জরিপ কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পাথর ছোঁড়ার ঘটনার পরপরই জরিপ দলটি দিনের জন্য তাদের কাজ শেষ করে। কিছু দুষ্কৃতীকারী পাথর ছোঁড়ার ছোড়ে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। মসজিদের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।

সমালোচকরা বলেছেন, মূলত উত্তেজনা তৈরি করতেই মসজিদটিতে জরিপ চালানোর মতো নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর মাধ্যমে ভারতের উপাসনা আইন ১৯৯১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এ আইনে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে।

প্রায় ৫০ জন আহত ও তিনজকে হত্যার পরও মসজিদটিতে জরিপ চালিয়েছে জরিপকারী দল। তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মসজিদটির বিভিন্ন জায়গার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে জরিপের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.