আমরা সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই: ড. সলিমুল্লাহ খান

আমরা সমতা ভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই উল্লেখ করে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, অন্ধ অনুকরণ ও প্রভু ভক্ত বন্ধ হওয়া উচিত। প্রত্যেক অপরাধের বিচার হওয়া উচিত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বেনার নিউজ আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেনার নিউজের আসিফ ইমতিয়াজ রবি।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, সমন্বয়ক হাসান আব্দুল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমীন, মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম তুলি, গণআন্দোলনে নিহত জাহিদ হোসেনের পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন, নিহত নাফিজের মা নাজমা আক্তার নাফিসা, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমরা সমতা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। ১৯৭১ সালে সাম্য, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা ও বাকস্বাধীনতাকে সামনে রেখেই স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। ১৯৭২ সালেই আমাদের স্বাধীনতা বেহাত হয়েগেছিল। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেই নাই তাদেরকে জাতির পিতা বলেছেন আর যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদেরকে বাইরে রাখা হয়েছে। আমরা ১৯৪৭ সালে একবার স্বাধীনতা পাই, সেটা বেহাত হওয়ায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিলাম। আবার বেহাত হলে ২০২৪ সালে নতুন স্বাধীনতা আসে। এটাকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয় সে অর্থে তৃতীয় স্বাধীনতা বলতে পারি।

অন্ধ অনুকরণ ও প্রভু ভক্ত বন্ধ হওয়া উচিত। প্রত্যেক অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব শিক্ষক গণআন্দোলনের বিরোধীতা করেছে তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।

স্বাগতম বক্তব্যে বেনার নিউজের হেড অব নিউজ শরিফুর জামান পিন্টু বলেন, বেনার নিউজ ৪ বছর ধরে বন্ধ করা ছিল, তাই আমরা যতভালোই কাজ করি না কেন, তা জনসাধারণের কাছে তেমন ভাবে পৌঁছাতে পারি নি। বেনার নিউজ যুক্তরাষ্ট্রের টাকায় চললেও আমাদের সাংবাদিকতার নীতির ক্ষেত্রে তারা কখনোই হস্তক্ষেপ করে নি। গত ৫ আগষ্ট এটা নিজে থেকে খুলে দেওয়া হয়। বেনার নিউজ নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, আমার কেন গুম খুনের নিউজ বড় করে প্রকাশ করি। আমরা কেন মানবাধিকার নিয়ে এতো সরব থাকি? তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকরা এই সব বলার চেষ্টা করতো। বেনার নিউজের তো প্রধান কাজই হল, মানবাধিকার। ভবিষ্যতেও আমরা গুম-খুন, মৌলবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এমন একটা দেশ চাই, যেখানে কেউ মত প্রকাশে ভয় পাবে না। কেউ দেশ থেকে বিদেশ গিয়ে আর ফিরতে চাইবে না, এমন বাংলাদেশ না। সবাই শান্তিতে বসবাস করবে তেমন বাংলাদেশ চাই। আমরা নতুন বাংলাদেশ মেরামতের লক্ষ্যে কাজ করছি, এটা দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা দাবির প্রতি ধ্বনি। আমরা সেই কাজ গুলোই করতে চাচ্ছি।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ আগষ্টের আগে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা কি ছিল? রাজনীতি হলো পার্সেপসন এটা ফ্যাক্ট না। আমরা সরকারের মন্ত্রীদের সাথে সংলাপে বসেছি; এটা প্রচার করা হয়। আসলে এটি ঠিক ছিল না, আমি মিডিয়ার ওপর চরম ক্ষুব্ধ। ডিজিএফ আই আমাদের তুলে নিয়ে যায় এবং আমাদের সাথে পতিত সরকারের মন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমরা পদ্মার সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা প্রচার না করে ডিজিএফআইয়ের বানিয়ে দেওয়া হেডলাইন প্রচার করা হয় এবং জাতির সামনে আমাদের ভিলেন বানানো হয়। এখানে সংবাদ মাধ্যমগুলো এখানে দেখিছি, সেদিনও সেখানে আপনারই ছিলেন।

মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গুম হয়ে যাওয়া সকল পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অনুরোধ করব আপনারা বেরিয়ার থেকে বেরিয়ে আসেন। আমি এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই, গুম হওয়া প্রতিটি ভাইয়ের হাত ধরে দেখতে চাই। রাষ্টিয় বাহিনীর নিরাপত্তার নামে তাদের প্রসাশনিক কাজের ধরণ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

নিহত নাফিজের মা বলেন, আমার নাফিসের জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশের পরিবর্তন হয়েছে। কোনো হাসপাতালে আমার নাফিসের চিকিৎসা করতে দেওয়া হয় নাই। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আমার ছেলের লাশের বিনিময়ে টাকা চাইছিল। আমার নাফিসের মতো যত শহীদ হয়েছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।

নিহত জাহিদ হোসেনের পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন, আমি জীবনেও ভাবিনি আমার আমার ছেলে দেশের জন্য রক্ত দিবে আবার স্বাধীন করবে। কোনো বাবা মাই তা চাই না, তার সন্তান জীবন দিক। চেয়ারের জন্য যদি এমন ভাবে মানুষ হত্যা করা হয়, আপনারই বলেন আমরা কি এমন বাংলাদেশ চাই। আমর ছেলের রক্তের বিনিময়ে এমন বাংলাদেশ চাই। যেখানে আর কোনো খুনাখুনি নায হয়, এমন বাংলাদেশ চাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমীন বলেন, আমরা আসলে এমন বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেটা গত ১৬ বছরের মতো না। আমরা এমন একটা সরকার ব্যবস্থা যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। যেখানে চাকরির জন্য নির্দিষ্ট দল করতে হবে না। যেখানে মেধা দিয়ে যোগ্যতা নির্ধারণ হয়। ক্ষমতা পরিবর্তনে মানে একটি দল থেকে আরেকটি দলের হাতে ক্ষমতা যাওয়া নয়। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কথা বলছি। আমরা তিনটি বিষয়ে কথা বলছি, মানবাধিকার, সাম্য মানবিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই।

শিল্পী কাজী নওশাবা বলেন, সিসিমপুরের মতো বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমরা আরেক জনের কথা শুনবো, তাকে বুঝতে পারবো।

বিগত পতিত হাসিনা সরকারের সময় গুমের শিকার হওয়া ড. মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমি মায়ের ডাককে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি দেখেছি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এটার সাথে জড়িত ছিল এবং সাংবাদিকদের অনেকেই তা জানতো কিন্তু বলতে পারে নি। কী চাই নতুন বাংলাদেশে ‌বলতে হলে… আমি মানবিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে কেউ গুম খুনের শিকার হবে না। গুমের চেষ্টা হলে জনতা তার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আমরা দেশের সকলের প্রতি মানবিকতা দেখতে চাই।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.