ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে গুরুত্ব পাবে ইসরায়েলের স্বার্থ

আগামী জানুয়ারিতে শপথ নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যেই নতুন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কারা থাকছেন– তা জানিয়ে দিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে আরও গুরুত্ব পাবে ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের স্বার্থ। সম্প্রতি, মাইক হাকাবিকে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যিনি ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের প্রিয়পাত্র।

বিবিসির এক সংবাদে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইসরায়েলে তাঁর দেশের নয়া রাষ্ট্রদূত হতে চলেছেন মাইক হাকাবি। তবে আপাতত আমেরিকার নতুন প্রশাসনের নীতির বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।

রিপাবলিকান দলীয় আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের সাবেক এই গভর্নর শুধু বলেছেন, ‘আমি কোনো নীতি তৈরি করব না। কেবল প্রেসিডেন্টের নীতিগুলো বাস্তবায়ন করব।’

তবে সে নীতি কী হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন, ইতোমধ্যেই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও অধিকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্তগুলোকে উল্লেখ করে। যেসব সিদ্ধান্তকে স্বাদরে গ্রহণ করে ইসরায়েলের ডানপন্থীরা, আর ফিলিস্তিনিরা করে প্রত্যাখ্যান।

হাকাবি বলেছেন, ‘(ইসরায়েলের জন্য) তাঁর (ট্রাম্পের) চেয়ে বেশি অন্য কেউ করেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি প্রত্যাশা করি– এবারও তার ধারাবাহিকতা থাকবে।”

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেন– তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্পের হাকাবিকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েলের ডানপন্থীরা। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি আরও বিস্তার করার যে নীতি তাঁদের, হাকাবির নিয়োগ সেক্ষেত্রে আরও সুবিধেজনক ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করেন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের দুজন অতি-ডানপন্থী মন্ত্রী মাইক হাকাবিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) – এ ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ হাকাবিকে স্বাগত জানিয়ে তাঁকে ইসরায়েলের একজন ‘চিরাচরিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ‘মাইক হাকাবি’ লিখে সঙ্গে দিয়েছেন ভালোবাসার প্রতীক হার্ট চিহ্নের ইমোজি।

হাকাবির আসন্ন নিয়োগে তাঁরা উচ্ছ্বসিত কেন– তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন স্মোত্রিচ ও বেন গাভির। কারণ যেসব ভূখণ্ড নিয়ে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল– সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনে বরাবর একনিষ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন হাকাবি।

২০১৭ সালে পশ্চিম তীরে সর্ববৃহৎ একটি ইসরায়েলি বসতি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাইক হাকাবি। এরপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘বসতি বলে কোনো ব্যাপার নেই। এগুলো হচ্ছে কমিউনিটি। এগুলোকে মহল্লা ও শহর বলতে হবে। অধিকৃত এলাকা বলেও কিছু নেই।’

পরের বছরে মাইক হাকাবি বলেছিলেন, আমি মনে করি, জুডেয়া ও সামারিয়ার মালিকানা স্বত্ব হচ্ছে ইসরায়েলের।

ইসরায়েলের অনেকেই অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ঐতিহাসিক এই নামে অবিহিত করেন, যেটি ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করেছিল ইসরায়েল। একইনামে পশ্চিম তীরকে উল্লেখ করার মাধ্যমে হাকাবি ইসরায়েলের ডানপন্থীদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতাকে আরও স্পষ্ট করেছেন।

এর আগের ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৯ সালে ঘোষণা দেয় যে, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পশ্চিম তীরে স্থাপিত ইসরায়েলি বসতিগুলোকে তারা অবৈধ মনে করে না। যা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ কয়েক দশকের নীতিগত অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। ২০২০ সালের এক শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েলি বসতিগুলোকে আত্মীকরণের সিদ্ধান্তে সবুজ সংকেত দেওয়াসহ আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসন; সঙ্গতকারণেই যেগুলোকে সুনজরে দেখেছেন ইহুদি বসতিস্থাপনকারীরা, যাদের বড় অংশ হচ্ছেন নেতানিয়াহু, বেন গাভির ও স্মোত্রিচের সমর্থক।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে হাকাবি থাকলে- সেটি তাঁদের এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার পক্ষেই যাবে। যে এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের অঙ্গীভূত করা। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দ্রুত এগোবে বলে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী।

গত সোমবার তারই ইঙ্গিত দেন স্মোত্রিচ। তিনি বলেন, ২০২৫ হবে পশ্চিম তীরের ওপর আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বছর। এরমধ্যেই অধিকৃত এই অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করতে – সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষগুলোকে দরকারি প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান।

পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ও প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ আন্দোলনের নেতা মোস্তফা বারঘুতির কাছে এ যেন তাঁর বহুদিনের ভয়কেই বাস্তবে রূপ নিতে দেখা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.