শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ‘রেড অ্যালার্ট’ চেয়ে ইন্টারপোলে চিঠি

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড অ্যালার্ট নোটিশ চেয়ে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে গতকাল তার কার্যালয় এ চিঠি দিয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।

আজ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গত পরশু ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর জন্য বা রেড অ্যালার্ট জারি করার জন্য অনুরোধ করেছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মামলার আসামি, তিনি পলাতক আছেন। চিফ প্রসিকিউটর অফিস থেকে আমরা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি ইন্টারপোল কাছে।’

শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোল যেন তাকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা নেয় এবং রেড অ্যালার্ট জারি করে, সে ব্যাপারে আমরা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। আমরা সরাসরি ইন্টারপোলকে এই চিঠি লিখেছি। তিনি (শেখ হাসিনা) মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আওতার বাইরে তিনি চলে গেছেন।

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং সাময়িকভাবে গ্রেপ্তারের জন্য অনুরোধ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়।

ট্রাইব্যুনাল আজ জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাকির হোসেনসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে জানান প্রধান প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘আমরা চারজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম, আদালত সেটা মঞ্জুর করেছেন। এই চারজনের মধ্যে একজন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন। এক তরুণকে বুকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এই পুলিশ অফিসার ও তার লাশকে নানাভাবে বিকৃত করে। জাকির হোসেন এখন পলাতক আছেন। জাকির হোসেনসহ আরও তিনজন পুলিশ অফিসার যাত্রাবাড়ীর নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে তদন্ত সংস্থার কাছে।’

এর আগে গত ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনাসহ সব পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। পলাতক আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। খুব দ্রুতই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে। পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্র পৃথিবীর যে দেশেই থাকুক তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

গত ১৭ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অপর দুই জন হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

অন্য যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তারা হলেন- শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ ৪৬ জন।

এর আগে পৃথক মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.