আয়কর অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কার্যকরী মাধ্যম

করদাতাদের সেবা গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে নভেম্বর মাসব্যাপী শুরু হচ্ছে আয়কর তথ্য-সেবা মাস। আয়কর রাজস্ব আহরণের কেবলমাত্র অন্যতম প্রধান খাতই নয় বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারও কার্যকরী মাধ্যম।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যাদের পর্যাপ্ত আয় আছে তাদের নূন্যতম আয় কর দিতে হবে। যার আয় পর্যাবসনার নিচে তাকে কোন কর দিতে হবে না। আয়করের মাধ্যমে রাজস্বের বৃহত্তম অংশ আহরণের ক্ষেত্রে সকল দেশই সচেতন প্রয়াস চালায়। কর সচেতনতা বৃদ্ধি ও আরো নিবিড় আয়কর তথ্য-সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগ নভেম্বর মাসে বিগত অনেকগুলো বছর ধরে বিশেষ আয়কর তথ্য-সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তিনি বলেন, প্রধানতম উদ্দশ্যে হলো কর সংস্কৃতির বিকাশ, কর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মানতি করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। করদাতা-বান্ধব কর ব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কর বিভাগ বিগত অনেকগুলো বছর ধরে আয়কর তথ্য-সেবা মাসে প্রয়োজনীয় আয়কর তথ্য-সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছে। আয়কর মেলা আয়োজনের পরিবর্তে সকল কর অঞ্চলে বিগত বছরের ন্যায় মেলার পরিবেশে নভেম্বর মাসব্যাপী আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য সেবা প্রদান করা হবে।

তিনি আরও বলনে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রাজ্ঞ নির্দেশনা ও অনুশাসন অনুযায়ী আয়কর তথ্য-সেবা মাসের সার্বিক কাজে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাগণের আয়কর রির্টান অনলাইনে দাখিলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করর্পোরেশনের আওতাধীন সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের অন্য সকল করদাতাগণকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। কর সংস্কৃতির বিকাশ, কর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মানিত করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের লক্ষ্যে নভেম্বর মাসব্যাপী আয়কর তথ্য ও সেবা প্রদানের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সাংবাদকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান খান বলেন, অনলাইনে করদাখিলে সহজতর, দ্রুততর, ব্যয় হ্রাসসহ অনেকগুলো সুবিধা আছে। তবে সাইবার নিরাপ্তার বিষটিও আছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পুরোপুরি কর রিটার্নের জন্য ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুকেছে আরাও কাজ করছি। সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি রান করেই আমরা তা করছি। এখন গাড়িতে চড়লে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তো আমরা গাড়িতে চড়া বাদ দিতে পারি না তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহারের ঝুঁকি থাকলেও আমরা এর সুবিধা নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পরি না।

তিনি আরও বলেন, ত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সিস্টেমটি ব্যবহার করে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার কর দিচ্ছে। এটা ভবিষ্যৎতে ৫০ হাজার হবে।

সন্ধ্যায় এনবিআরের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আয়কর তথ্য-সেবা মাস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইনভিত্তিক মিডিয়াসমূহে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রোড়পত্র প্রকাশ- আয়কর দিবস ২০২৪ পালন উপলক্ষে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য (কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও আহবায়ক (আয়কর তথ্য-সেবা মাস ২০২৪ উদযাপন কমিটি)-এর বাণী, নিবন্ধ ও স্থবি সম্বলিত ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এছাড়া টিভিতে আলোচনা অনুষ্ঠান-আয়কর প্রদানে উৎসাহ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা ও সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে মতবিনিময় সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়কর তথ্য-সেবা মাস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে ও আয়কর বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পোস্টার ও উৎসাহব্যঞ্জক স্লোগান সম্বলিত প্রস্তুতকৃত স্টিকার, বেলুন, বর্ণিল ফেস্টুন ও ব্যানার বিভিন্ন কর অঞ্চলে স্থাপন করা হবে। আয়কর তথ্য-সেবা মাসে সম্মানিত করদাতাগণকে প্রতিটি কর অঞ্চলে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হবে। সম্মানিত করদাতাগণ নির্ধারিত কর অঞ্চলে তাঁদের ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের স্ব স্ব আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

প্রতিটি কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থানে রিটার্ন গ্রহণ বুথ এবং হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে রিটার্ন গ্রহণ এবং করদাতাগণকে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র প্রদান করা হবে। সমগ্র বাংলাদেশের ৮৬৯ টি সার্কেলের করদাতাদের ৪১ টি কর অঞ্চলে সেবা বুথ স্থাপনের মাধ্যমে নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন গ্রহণের সেবা প্রদান করা হবে। আয়কর তথ্য-সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিষ্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন রেজিষ্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল, ই-পেমেন্ট (এ-চালান ও অন্যান্য) এর ব্যবস্থা রাখা হবে।

কর অঞ্চল-৪ এবং কর অঞ্চল-১৬, ঢাকার ব্যবস্থাপনায় সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকায় ই-টিআইএন রেজিষ্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন রেজিষ্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল সুবিধা ও হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ৩-১৮ নভেম্বর পর্যন্ত কর তথ্য সেবা প্রদান করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনে ২৪-২৮ নভেম্বর কর তথ্য সেবা প্রদান করা হবে। কর অঞ্চল-১১, ঢাকার ব্যবস্থাপনায় ১৮-১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর সেবা প্রদান করা হবে। করদাতাগণকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য যেনো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারে সেজন্য অনলাইন রিটার্ন রেজিষ্ট্রেশন এবং অনলাইন রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সম্পর্কে তাদেরকে কর অঞ্চল-৯, ঢাকার সহযোগীতায় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ পদ্ধতি সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৯ সেপ্টেম্বর থেকে করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করেছে।

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.