দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠি বসুন্ধরা গ্রুপের দুই কোম্পানি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের চরম হতাশ করেছে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে-মেঘনা সিমেন্ট মিলস পিএলসি ও বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। কোম্পানি দুটির একটিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেবে না বলে জানিয়েছে। মন্দা বাজারে এমন নেতিবাচক খবর বিনিয়োগকারীদের হতাশা ও ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) মেঘনা সিমেন্ট মিলস পিএলসি ও বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বশেষ হিসাববছরের (২০২৩-২০২৪) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন করা হয়। এ সভাতেই আলোচিত বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বশেষ বছরে একটি কোম্পানি বিশাল লোকসান দেখিয়েছে। অন্যদিকে মুনাফা দেখালেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লোকসান এবং লভ্যাংশ না দেওয়ারে বিষয়টিকে রহস্যজনক মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রথম কোম্পানি হিসেবে মেঘনা সিমেন্ট মিলস পিএলসি ১৯৯৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি মোটামুটি পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত ৫ বছরে কোম্পানিটি কখনো লোকসান দেয়নি। প্রতিবছরই কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। কিন্তু এবার কোম্পানিটি বিশাল লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৭ টাকা ১৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। অথচ তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৪৯ পয়সা আয় ছিল। এর অর্থ দাঁড়ায় শুধু চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৭ টাকা ৬৫ পয়সা লোকসান দিয়েছে, যা অনেকটা অবিশ্বাস্য। কারণ আলোচিত বছরটি ছিল সিমেন্ট খাতের জন্য খুবই উপযোগী একটি সময়।
গত বছর মেঘনা সিমেন্ট শেয়ার প্রতি ৭ টাকা ১৬ পয়সা লোকসান হয়েছে দেখালেও সিমেন্ট খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর চিত্র। এ সময়ে ক্রাউন সিমেন্ট শেয়ার প্রতি ৬ টাকা ৭৪ পয়সা, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৭ টাকা ৪ পয়সা, কনফিডেন্স সিমেন্ট ৮ টাকা ৭৩ পয়সা আয় করেছে। অন্যদিকে লাফার্জহোলসিম তিন প্রান্তিকে আয় করেছে ২ টাকা ৮৫ পয়সা।
বসুন্ধরা গ্রুপের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পরবর্তী ৫ বছরে সর্বনিম্ন ১ টাকা ৬৪ পয়সা ও সর্বোচ্চ ২ টাকা ৯২ পয়সা ইপিএস দেখিয়েছে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্ত পর প্রথম বছর ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও পরবর্তীতে তা ১০ শতাংশে নেমে আসে। এবার শুন্য শতাংশ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
বসুন্ধরা পেপার মিলস বুকবিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) উচ্চ প্রিমিয়ামে বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে বাজারে আসে। কোম্পানিটি আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮০ টাকা দরে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। উচ্চ দামে শেয়ার বিক্রির পাঁচ বছর যেতে না যেতেই বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করার এ ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) এম এম জসিম উদ্দিন অর্থসূচককে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এলসি সঙ্কটের কারণে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বসুন্ধরা পেপার মিলসের পরিচালনা পর্ষদ মনে করছে, সামান্য যে মুনাফা হয়েছে, তা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হলে কোম্পানির ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ওই টাকাটা কোম্পানির তহবিলে থাকলে এ ঝুঁকি কিছুটা কমে আসবে। এ কারণে কোম্পানিটি লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
তিনি বলেন, লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারেনি মেঘনা সিমেন্ট মিলস। তবে কেন এত বড় লোকসান হয়েছে তার কোনো কারণ জানাননি তিনি।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.