পুঁজিবাজারে বহুল আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের ওরফে হিরু ও তার সহযোগীদের প্রায় ডজন খানেক কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে ২০২২ সালে বিভিন্ন মেয়াদে ১৪ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা দায়ের করেছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রেজাউল করিম জানান, বকেয়া জরিমানা আদায়ের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ ৪ টি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেছে।
নিজের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয়ে হিরু বলেন, ‘কমিশন জরিমানা করার পর ৫-৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। পরবর্তীতে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধে কমিশন একবার সময় বাড়িয়েছিল। তবে বাজার ভালো না থাকা ও শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় জরিমানার টাকা দিতে পারিনি।’
কমিশনের একটি এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১টি কোম্পানির শেয়ারমূল্যে প্রভাব খাটিয়ে সিকিউরিটিজ আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য আসামিদের ১৪ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করা হয়। কিন্তু এরপর প্রায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদনের তথ্য মতে, হিরু ও তার সহযোগীরা গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন শুজ, ওয়ান ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, বিডি কম অনলাইন, আইপিডিসি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারমূল্য কারসাজিতে জড়িত ছিলেন।
নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধ না করায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আগের কমিশন জরিমানা পরিশোধের সময় এক বছর বাড়িয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের কয়েকদিন পরেই পদত্যাগ করেন শিবলী রুবাইয়াত।
১২ কিস্তিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য আরও এক বছর সময় চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছিলেন হিরু। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রসঙ্গত হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, তার বাবা আবুল কালাম মাতবর ও তাদের কোম্পানি ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও দেশ আইডিয়াল কো-অপারেটিভকে ২০২২ সালে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করে কমিশন। ১১টি কোম্পানির শেয়ারদরের কারসাজিতে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাদেরকে এই জরিমানা করা হয়।
বিএসইসি এনফোর্সমেন্ট বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, তাদের রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইন প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং আনরিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইন প্রায় ১০০ কোটি টাকা ছিল।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদরের কারসাজিতে জড়িত থাকার কারণে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, হিরু এবং তাদের কোম্পানি এশাল কমিউনিকেশন, মোনার্ক মার্ট, লাভা ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও আবুল কালাম মাতবরকে মোট ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করে রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইন। এশাল কমিউনিকেশনকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা, সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা, হিরুকে ২৫ লাখ টাকা এবং মোনার্ক মার্ট, লাভা ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও মাতবরকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
অর্থসূচক/এএকে/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.