ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এসব হামলা নিয়ে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া হামলায় ইরানে কী পরিমাণ হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইরানে হামলার তথ্য নিশ্চিত করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনগণ ও ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।
এদিকে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানে ইসরায়েল যে হামলা চালাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
ইসরায়েল পত্রিকা হায়ম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানে যখন হামলা চালানো হয়েছে, তখন তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বাংকারে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। সেখান থেকে তারা এই হামলার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে অন্তত ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেইদিনেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঙ্কার দেন, ইরানকে এর কড়া মূল্য দিতে হবে। এরপরেই ইরানে হামলার খবর এলো।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইরানে এই হামলার সঙ্গে জড়িত নেই তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গভীরভাবে এই ঘটনা নজর রাখছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানপন্থি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলায় এক হাজার ২০৬ জন লোক নিহত হয়। এরপর গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইসরায়েল। পরবর্তীতে ইসরায়েল তার দেশের উত্তরের সীমানা নিরাপদ করতে লেবানন আক্রমণ করে এবং সেখানে থাকা ইরানপন্থি হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার বিভিন্ন লক্ষবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালায়।
চলতি বছরের ১ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি হামলা চালায়। ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইরানের বিপ্লবী গার্ড রেজিমেন্টের জেনারেল আব্বাস নিলফোরোসানকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ওই হামলা চালানো হয় বলে জানায় ইরান। এ ছাড়া ১ জুলাই তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিশোধের কথাও উল্লেখ করে ইরান। এই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে।
এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন শনিবার জানায়, রাজধানী তেহরানের আশপাশে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। অনুষ্ঠানে টেলিভিশন উপস্থাপক বলেন, ‘কয়েক মিনিট আগে তেহরানের আশপাশে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।’ পরে জানানো হয় মোট ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে ইরানের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানের কাছে প্রধান তেল শোধনাগারে কোনা বিস্ফোরণ বা আগুনের দেখা মিলেনি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল, তাদের অবকাঠামোগুলো হামলার শিকার হলে আরও ‘শক্ত জবাব’ দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী গার্ডের জেনারেল রসুল সানাইরাদ বলেন, তার দেশের পারমাণবিক স্থাপনা আক্রান্ত হলে সেটিকে নিরাপত্তার ‘লাল সীমা’ অতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র শন সাভেট বলেছেন, ইরানের সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা ইরানের ১ অক্টোবরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ এবং তা ইসরায়েল নিজেদের রক্ষার জন্য করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.