বাংলাদেশকে ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। হাসান মাহমুদের শুরুর ৫ বলে ৯ রান নিলেও শেষ বলে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন এইডেন মার্করাম। প্রোটিয়া অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে এসেছেন ট্রিস্টিয়ান স্টাবস। ডি জর্জিকে সঙ্গে নিয়ে প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন এই ব্যাটার।
যদিও মেহেদী হাসান মিরাজের বল অন সাইডে খেলার চেষ্টায় সোজা শর্ট লেগ ফিল্ডার বরাবর মারেন স্টাবস। ধরার মতো উচ্চতায় থাকলেও হাতে জমাতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। ৮ রানে বেঁচে যান স্টাবস। এরপর তাইজুলের ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মারেন তিনি। এর এক বল পরই জবাব দেন তাইজুল। ফুল লেংথ ডেলিভারি ব্যাক ফুটে রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টায় স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ধরা পড়েন ২৭ বলে ২৩ রান করা স্টাবস। এরপর ডেভিড বেডিংহ্যামকে নিয়ে আর কোন উইকেট না হারিয়ে চা বিরতিতে যান জর্জি।
চা বিরতির পর নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি বেডিংহ্যাম। তাইজুলের বেশ বড় টার্ন করা ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হলেন তিনি। ২৫ বলে ১১ রান করে ফিরলেন তিনি। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে আসেন রায়ান রিকেল্টন। টোনি ডি জোর্জি ও তিনি মিলে দলের রান ১০০’র ঘরে নিয়ে যান। তবে তাইজুলের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ওপেনার। ৭২ বলে করেন ৩০ রান। নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করতে অবশ্য বেশী সময় নেননি তাইজুল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল লিভ করতে গিয়ে বোল্ড হন ম্যাথিউ ব্রিটসকি।
প্রোটিয়া ব্যাটাররা লিড নিলেও সেই লিড বড় হওয়ার আগেই নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। রিকলেন্টনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার।
এর আগে টসে ভাগ্য নাজমুল হোসেন শান্তর পক্ষে গেলেও সুযোগটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তোপে প্রথম সেশনে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকদের ব্যাটিং অর্ডার। ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে গেলেও বিরতির পর ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় শান্তবাহিনী। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে এইডেন মার্করামের উইকেট হারিয়ে ব্যাট করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয় ওভারে ভিয়ান মুল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারি ড্রাইভ করার চেষ্টায় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাঁহাতি ওপেনার। রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। এরপর মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গে দিতে এসে বেশীক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি মুমিনুল হকও।
ভিয়ান মুল্ডারের দ্বিতীয় ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মুমিনুল। ফুল লেংথ ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় কানায় লেগে কট বিহাইন্ড হন ৪ রান করা এই ব্যাটার।এরপর চার নম্বরে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু শান্তও উইকেটে বেশীক্ষণ থিতু হতে পারেননি। রাউন্ড দা উইকেট থেকে মুল্ডারের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় শান্তর ব্যাটের সামনের কানায় লাগে। শর্ট কভারে সহজ ক্যাচ নেন কেশাভ মহারাজ। ৭ বলে ৭ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দ্রুত ৩ ব্যাটারের বিদায়ে হাল ধরার চেষ্টায় ব্যাট করতে থাকেন মুশফিকুর রহিম ও জয়। তাদের ব্যাটে প্রথম ঘন্টার ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু পানি বিরতির পর আক্রমণেই ফিরেই আঘাত করেন কাগিসো রাবাদা। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন ২০ বলে ১১ রান করা মুশফিকুর রহিম। একইসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেন রাবাদার। দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। খানিক পর দারুণ এক ডেলিভারিতে লিটন দাসকেও ফিরিয়ে দেন রাবাদা।
রাবাদার লাফানো ডেলিভারিতে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। বাম দিয়ে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন ট্রিস্টান স্টাবস। ৫০’র আগে ৫ উইকেট হারালেও মেহেদি হাসান মিরাজ ও জয় মিলে দলকে ৫০’র ওপর নিয়ে যান। কিন্তু লাঞ্চের আগে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। কেশব মহারাজের বলের লাইন মিস করেন মিরাজ। লেগ বিফরের ফাঁদে পড়ে দলীয় ৬০ রানে বিদায় নেন তিনিও। এরপর লাঞ্চে বিরতিতে যায় শান্তবাহিনী। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ভালো শুরু পেয়েছিলেন জয়। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ২ বলের ব্যবধানে আউট হয়েছেন ওপেনার জয় ও অভিষিক্ত জাকের আলী।
ইনিংসের ৩০তম ওভার করতে আসেন ডেন পিট। এই অফ স্পিনারের ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মারেন মাহমুদুল। পরের বল করতে রাউন্ড দ্য উইকেটে আসেন এই বোলার। সেই আর্ম ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৯৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলা জয়। এরপর মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া বলে স্টাম্পড হয়েছেন। অভিষেক ম্যাচের অভিষেক ইনিংসে তার ইনিংস থেমেছে ১৫ বলে মাত্র ২ রানে। দলকে ঠেলেঠুলে ১০০’র ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর রাবাদার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন নাইম হাসান। শেষ উইকেটে হিসেবে তাইজুলকে বোল্ড করেন মহারাজ। ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.