হামাস প্রধানকে খুঁজে পেয়ে যেভাবে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েল গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হামাসের নেতা সিনওয়ারকে খুঁজছিল। যিনি ৭ অক্টোবরের হামলার পরপরই গোপনে চলে যান। ৬১ বছর বয়সী ইয়াহিয়া সিনওয়ার বেশিরভাগ সময় গাজা উপত্যকার নিচে সুড়ঙ্গের ভেতরে থাকতেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সুড়ঙ্গে তার সুরক্ষার জন্য কয়েকজন দেহরক্ষী এবং ইসরায়েল থেকে আটককৃত কিছু জিম্মি ছিল যাদেরকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

যদিও নিহত হওয়ার পর দেখা যায় তিনি দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি টহলদারদের একটি দলের মুখোমুখি হন তখন তার সাথে খুবই কম সংখ্যক দেহরক্ষী ছিল। কোনও বন্দিও সেখানে পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, তাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি ইউনিট বুধবার রাফাহ অঞ্চলের তাল আল-সুলতান এলাকায় টহল দিচ্ছিল। ইউনিটি ৩ জন সশস্ত্র ব্যক্তি চিহ্নিত করে এবং তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সবাই নিহত হয়। সেই সময় সংঘর্ষটি বিশেষ কিছু মনে হয়নি এবং সৈন্যরা বৃহস্পতিবার সকালের আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যায়নি।

বৃহস্পতিবার যখন মরদেহ পরীক্ষা করা হচ্ছিল তখন একজনের সাথে হামাসের নেতার অদ্ভুত ধরনের মিল লক্ষ্য করা যায়। তবে আত্মঘাতী কোনও ফাঁদ থাকার ঝুঁকি বিবেচনায় দেহটি সেখানে রেখেই দেওয়া হয়েছিল। এর পরিবর্তে একটি আঙুলের অংশ কেটে নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য ইসরায়েলে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার দেহ বের করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, তার বাহিনী “জানতো না তিনি সেখানে ছিলেন, কিন্তু আমরা কাজ চালিয়ে গেছি। তার সৈন্যরা তিনজন পুরুষকে বাড়ি বাড়ি ছুটতে দেখেছিল এবং তারা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই তাদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যিনি পরে সিনওয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তিনি একাই একটি ভবনে দৌড়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে সেখানে ড্রোনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়।”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিনওয়ার হত্যার শেষ মুহূর্তগুলো ড্রোন ফুটেজের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রকাশ করেছে। ড্রোনটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের দ্বিতীয় তলার খোলা জানালা দিয়ে উড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরে কিছুদূর গিয়ে থেমে যায়। সেখানে মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা একজন ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে পড়ে থাকা একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়। সোফাগুলোও ধুলায় ধূসর বর্ণ ধারণ করেছিল। ড্রোনের কারণেও কিছুটা ধুলা উড়ছিল।

মুখমণ্ডল ঢাকা যে ব্যক্তিকে সিনওয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে তাকে দেখে আহত মনে হচ্ছিল। তার হাতে লাঠির মতো একটা কিছু দেখা যায় যেটা তিনি ড্রোনের দিকে ছুড়ে মারেন।

ইসরায়েল বৃহস্পতিবার প্রথমে ঘোষণা করে যে সিনওয়ার স্থানীয় সময় বিকেলে গাজায় নিহত হয়েছে কি না সে “সম্ভাবনার তদন্ত করছে।” এই ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে একজন পুরুষের মৃতদেহের ছবি দেখা যায় সাথে হামাসের নেতার সাথে খুব মিল রয়েছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল এবং ছবিটি এতটা ভয়াবহ যে তা প্রকাশের উপযোগী না।

তবে কর্মকর্তারা সে সময় সতর্ক করেন যে নিহত তিনজনের মধ্যে কারও পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এরপর খুব বেশি সময় না যেতেই ইসরায়েলি সূত্রগুলি বিবিসিকে জানায়, তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে তাদের “আত্মবিশ্বাস বাড়ছে”। যদিও তারা বলেছিল যে মৃত্যু নিশ্চিত করার আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।

পরীক্ষাগুলো করতে দীর্ঘ সময় লাগেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল সিনওয়ারকে হত্যার কথা জানায়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “অশুভ শক্তি” একটি “আঘাতের সম্মুখীন” হয়েছে, যদিও গাজার যুদ্ধ শেষ হয়নি বলে সতর্কও করেন তিনি।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযানের ভিত্তিতে নিহত না হলেও আইডিএফ জানাচ্ছে তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সেসব এলাকায় কাজ করেছে যেখানে তিনি থাকতে পারেন। ইসরায়েলি বাহিনী সিনওয়ারকে দক্ষিণের শহর রাফাহতে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে এবং ধীরে ধীরে তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।

একটি বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, দক্ষিণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে “আমাদের অভিযান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গতিপথ সীমিত করে ফেলেছিল যেহেতু তাকে তাড়া করা হচ্ছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।”

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.