অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন যারা

চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন ড্যারন অ্যাসেমোগ্লু, সাইমন জনসন এবং জেমস এ. রবিনসন। সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গঠন করা হয় এবং সমৃদ্ধির ওপর তা কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণার জন্য সম্মানজনক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। নোবেল কমিটির প্রধান থমাস পার্লম্যান টেলিফোনে এবারের নোবেল বিজয়ীদের এই সুখবর জানান। এই ঘোষণার আগে রসায়নে নোবেলের জন্য মনোনীত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা সংক্ষিপ্ত তালিকা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। বরাবরের মতোই সব নথিপত্র অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রেখে তা জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়।

নোবেল কমিটি বলেছে, এই তিন অর্থনীতিবিদের গবেষণা জাতিগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধির পার্থক্য বোঝাতে সহায়ক হয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা কোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রমাণ করেছেন, দুর্বল আইন এবং জনসংখ্যাকে শোষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন বা পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে না। কেন এই ধরনের পরিস্থিতি ঘটে, তা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে তাদের গবেষণা।

ড্যারন অ্যাসেমোগল ১৯৬৭ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে পিএইচডি লাভ করেন এবং বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।

সাইমন জনসনের জন্ম ১৯৬৩ সালে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডে। ১৯৮৯ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি লাভ করেন এবং বর্তমানে সেখানেই অধ্যাপনা করছেন।

ব্রিটিশ নাগরিক জেমস এ. রবার্টসনের জন্ম ১৯৬০ সালে। তিনি ১৯৯৩ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

২০২৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয় করন মার্কিন অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন। গত ৫৪ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ নারী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেলজয় করেন ক্লডিয়া। তার আগে এই শাখায় এই পুরস্কার অর্জন করেছেন মাত্র ৩ জন নারী। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জিতেছিলেন তিন মার্কিন নাগরিক। তারা হলেন বেন এস বারন্যাঙ্কে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড, ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গবেষণা করায় এ পুরস্কার দেওয়া হয় তাদের।

২০২১ সালেও অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন তিনজন- ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংরিস্ট ও গুইদো ডব্লিউ ইমবেন্স। শ্রম অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ডেভিড কার্ড ও কারণগত সম্পর্ক বিশ্লেষণে পদ্ধতিগত অবদানের জন্য বাকি দুই অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় কি না তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সোশ্যাল সায়েন্সে ব্যাংক অব সুইডেন পুরস্কার’ নামে পরিচিত। এই পুরস্কারটি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং একই ধরনের মর্যাদা বহন করে। তবু এটি আলফ্রেড নোবেলের মূল পাঁচটি পুরস্কারের অংশ নয়, যা তিনি ১৯০১ সালে প্রবর্তন করেছিলেন। মূলত ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ৩০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছিল। কিন্তু অন্য পুরস্কারের সঙ্গে একই সময় ঘোষণা এবং সমমর্যাদার হওয়ায় এটি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার নামে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। এ বছর ৭ অক্টোবর চিকিৎসাশাস্ত্র, ৮ অক্টোবর পদার্থবিদ্যা, ৯ অক্টোবর রসায়ন, ১০ অক্টোবর সাহিত্য ও ১১ অক্টোবর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে পুরস্কারজয়ীর নাম প্রকাশের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা।

উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.