দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যেমন ফেরত আনতে হবে, দেশের ভেতরে যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামী দিনের যেকোনো সমস্যা নিরসনে দুর্নীতি দূর করতে হবে। দুর্নীতি দূর করতে না পারলে অনেক সম্ভাবনা কার্যকর হবে না।
দুর্নীতিবাজদের দৃশ্যমান শাস্তি না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। আবার মূল্যবোধভিত্তিক যে নজরদারির কথা আমরা বলছি, তা–ও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলে জনশুনানিতে এসব কথা বলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন এ কমিটির সভাপতি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, কিভাবে সচিবরা ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরাই রাজনীতিতে আসেননি বরং রাজনীতিবিদরাও ব্যবসায় জড়িয়ে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সময়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছে। যাদের আইন প্রণয়ন করার কথা, তারাও দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছে। যাদের আইনের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তারাও দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছে। যারা আইন প্রয়োগ করার কথা, তারাও দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছে। এই বুহগ্রাসী দুর্নীতি আমরা যদি দূর করতে না পারি, তাহলে অনেক সম্ভাবনাই কার্যকারী হবে না।’
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো কার্যকর করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচার হয়ে যাওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের ভেতরে যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদেরও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যদি তাদের দৃশ্যমান শাস্তি না হয়, তাহলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না, আমাদের নীতি ও মূল্যবোধভিত্তিক যে সমাজের স্বপ্ন দেখছি, তা দুর্বল হয়ে পড়বে।
এদিন জনশুনানিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। জনশুনানিতে শিক্ষক-ছাত্র, উন্নয়নকর্মী, আদিবাসী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে জনশুনানির আলোচনায় অংশ নেন ১২৫ জন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডির জ্যেষ্ঠ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
বক্তারা দুর্নীতি দূরীকরণ, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন গড়ে তোলা, গ্যাস–সংযোগ প্রদান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমাধানের কথা বলেন। এ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দূর করতে টেকসই রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং নির্বাহী বিভাগের দুর্নীতি রোধে সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানান।
জনশুনানিতে অংশ নিয়ে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা রাজশাহী নগরীসহ এ অঞ্চলের অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকল্প, প্রকল্পের দুর্নীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন। এসময় স্থানীয়রা উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য ও বেকারত্বের কথাও তুলে ধরেন।
অর্থসূচক/এএকে



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.