মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টায় ভারত সফর করছেন। মালদ্বীপ সরকারকে ৩০০০ কোটি রুপি (৩৬ কোটি ডলার) আর্থিক সহায়তা এবং দ্বিপাক্ষিক স্তরে ৪০ কোটি ডলারের ‘কারেন্সি সোয়াপ’ (মুদ্রা বিনিময়) সমঝোতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিবিসি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভারত সফররত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ তার দেশকে বিপুল আর্থিক সহায়তা করার জন্য ভারতকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সোমবার দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার বৈঠকের পর করা এই মন্তব্যকে মুইজ সরকারের তীব্র ভারত-বিরোধিতার নীতি থেকে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবেই দেখছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টায় ভারত ও মালদ্বীপ সোমবার ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি মালদ্বীপের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর ভারত সফরকালে এই চুক্তির ঘোষণা এল। রোববার ভারতে সফরে যান মুইজ্জু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে রাজঘাটে যান মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। ভারত যে সবসময় মলদ্বীপের পাশে রয়েছে, বৈঠক শেষে সেই বার্তাই দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভবিষ্যতে দুই দেশ একাধিক প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।
আর্থিক এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মলদ্বীপের পাশে ভারত সবসময় থেকেছে উল্লেখ করে মোদী বলেন, কোভিডের সময় মলদ্বীপের পাশে দাঁড়িয়ে টিকা পাঠিয়েছে ভারত। টিকা কিংবা সুপেয় পানি হোক, ভারত সবসময় ভাল প্রতিবেশীর ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতের বেঙ্গালুরু ও মালদ্বীপের আড্ডুতে দুই দেশের দূতাবাস খোলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মোদী জানান। অন্যদিকে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বলে উল্লেখ করেন মুইজ্জু।
বিবিসি জানায়, মুদ্রা বিনিময় চুক্তি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় পদক্ষেপের মধ্যে মালদ্বীপে রুপে কার্ড চালুর ঘোষণা এসেছে। ভারতের রুপে পরিষেবা মলদ্বীপে চালু হলে দেশটির রুফিয়া ব্যবস্থা আরও চাঙা হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন মোদী ও মুইজ্জু।
মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন গত বছরের শেষদিকে। নির্বাচনি প্রচারে জনগণের কাছে মুইজ্জুর মূল অঙ্গীকার ছিল- ‘ভারত হটাও’ নীতি। মূলত মালদ্বীপের ওপর ভারতের প্রভাব কমানোই ছিল তার লক্ষ্য।
সেকারণে মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপড়েন চলে আসছিল। মুইজ্জু চীনপন্থি হিসাবে পরিচিত। ক্ষমতায় আসার পর চীন সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক ‘বিতর্ক’ তৈরি হয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছিল ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে। তবে সেসব এখন অতীত। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুইজ্জু। পাঁচদিনের সফরে সস্ত্রীক তিনি ভারত সফর করছেন।
অর্থসূচক/ এএকে/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.