নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, তারা দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছে। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এ জন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবে, আমরা সেই বিষয়ে কথা বলেছি।
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে উন্মুক্ত করবো। আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরবো, কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, জনগণ এবং সরকার একসঙ্গে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে পারে। সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমান যে সরকার আছে, তারা কোনও ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এটা নিয়ে অচীরেই আমরা কাজ করবো। এটা দেরি হবে না। আমরা সামনে আগাতে চাই।
জামায়াত আমির বলেন, দুর্গাপূজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী, এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে, একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের ভাই-বোনরা উদযাপন করতে পারবে।
সংস্কারকে এক নম্বরে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কারের টাইমলাইন কী হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুটি বিষয় দেশবাসীর কাছে চেয়েছি এবং সরকারের কাছে জানিয়েছি। একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটা নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। দুটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটার একটু আগে জামায়াতের প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রবেশ করে। জামায়াতে ইসলামীর ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির আবু তাহের মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, এমএম শামসুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পওয়ার।
এ ছাড়া বিকাল সাড়ে তিনটায় গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বিকাল চারটায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকাল সাড়ে চারটায় হেফাজতে ইসলাম, পাঁচটায় ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ, সাড়ে ৫টায় এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে বসার কথা আছে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুইদিন বাদে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এবার তৃতীয় দফা সংলাপ চলছে। সবশেষ ৩১ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি ১ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনে ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসনে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.