পূজোতে স্বস্তি নেই কাঁচাবাজারে, বেড়েছে মাছ-মাংস ও ডিমের দাম

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজোর মহালয়ার মধ্য দিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে বইছে শরৎতের আমেজ। তবে স্বস্তিতে নেই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সাধারণ মানুষ। বেড়েছে মাছ মাংস ও ডিমের দাম, কমছে না কাঁচা সবজি সহ নিত্য পণ্যের বাজার দর। প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে নিম্ন আয়ের মানুষের দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস।

গত তিন সপ্তাহ থেকে নিত্য পণ্যের বাজার দাম কিছুটা চওড়া। তবে পূজোকে ঘিরে বেড়েছে মাছ-মাংস ও ডিমের দাম। এদিকে সবজির দাম গত দুই সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি হচ্ছিল আজও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাল-ডালের দাম অপরিবর্তীত রয়েছে।

প্রায় ১ মাস যাবৎ চওড়া মূল্যে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর এজিবি কলোনি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিন কাঁচা বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি সাদা আলু (হলেন্ডার) ৬০ টাকা ও লাল আলু বড়টা ৬৫ টাকা এবং ছোট দেশি আলু ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বেগুনের দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকায়, পেপে-৪০ টাকায়, কাঁচামরিচ ১৮০ টাকায়, ঝিঙা ৫০ টাকায়, করলা ১০০ টাকায়, মুলা ৫০ টাকায়, গাজর ১৭০ টাকায় এবং সিম ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৪৫ টাকায়, বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ১৮০ টাকায়, ঢেড়স ৮০ টাকায়, কাকরোল ৮০ টাকায়, ধুনদোল ৭০, বাধাঁকপি ৮০ ও ফুলকপি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। আর প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।

এজিবি কলোনি বাজারে সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক অর্থসূচককে বলেন, “গত এক মাস থেকে কাঁচা দ্রব্যের দাম কমেছে না। বরং আজও প্রতিটি সবজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিন দেখা যায়, চালের মধ্যে প্রতি কেজি আটাশ গত তিন সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি হচ্ছিল আজও ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায় এবং নাজিরসাহ ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া দেশি মুসরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ ও ইন্ডিয়ান ১১০ টাকা প্রতি কেজি এবং মুগের ডাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট মাছ কেজি প্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, টাকি মাছ ছোট সাইজ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও বড় সাইজ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, দেশি রুই ছোট সাইজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বড় সাইজের রুই ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাচ্চকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও মলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অপর দিকে এক কেজির ওপর ওজনের (গ্রেড) প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকায়। আর ৭০০-৯০০ গ্রাম (মাজলা) ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।

গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালী মুরগির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে সোনালীর আরেকটি জাত বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।

এদিকে ব্রয়লার ডিমের দামও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি ১৮০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে এবং ডজন প্রতি হাঁসের ডিম ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

জাকারিয়া আলম নামের একজন ক্রেতা বলেন, “গত কয়েকে সপ্তাহ থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এতে আমাদের মত মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর বাড়ছে চাপ। নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে কষ্ট হচ্ছে। নতুন সরকারের উচিৎ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো কার্যকর করা। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে বাজার নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া। ফুটপাত থেকে দোকান গুলো অপসারণ করা হয়েছে এটা একটা ভালো কাজ তবে দ্রব্য মূল্যের দাম না কমলে এসব কাজ করে সাধারণ মানুষ আসলে লাভবান হবে না।”

এদিকে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোকামে সরবরাহ কিছুটা কম। ব্যাবসায়ীরা দেশ জুড়ে ব্যাপক বৃষ্টির কারণে সরবরাহর ঘাটতি বলে দাবি করছেন। এর কারণে প্রতিটি পণ্যে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বৃদ্ধি বলে তাদের দাবি। যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও।

অর্থসূচক/এএকে/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.