ইসরাইলের হৃদপিণ্ডে আঘাত করেছি, প্রতিক্রিয়া দেখালে ‘ধ্বংসাত্মক হামলা’

ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।

আইআরজিসি বলেছে, আত্মরক্ষার তাগিদে তারা এই হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরপরই আইআরজিসি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু’। খবর- পার্সটুডে

আইআরজিসি বলেছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং আইআরজিসি’র ডেপুটি কমান্ডার আব্বাস নীলফোরুশানের শাহাদাতের বদলা নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। আমরা অধিকৃত ভূখণ্ডের ((ইসরাইল) হৃদপিণ্ডে আঘাত করেছি। ইসরাইল যদি কোনো রকমের প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করলে ‘ধ্বংসাত্মক হামলা’ চালিয়ে জবাব দেবে ইরান।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানছে ক্ষেপণাস্ত্র। মিসাইলের আঘাতে কোথাও কোথাও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ। দেশটির রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

এদিকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল সরকার। হামলার সময় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির আকাশসীমা। বাংঙ্কারে আশ্রয় নেন ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া এসব মিসাইল আটকাতে আয়রন ডোমসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বেও অনেক মিসাইল সরাসরি আঘাত হেনেছে। আর মিসাইলের আঘাতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, জর্ডানের আকাশে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দৃশ্য দেখা গেছে।

ইরানের এই হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিরাপত্তা বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান আজ রাতে একটি বড় ভুল করেছে এবং এর জন্য তাকে মাশুল দিতে হবে। ইরানের সরকার আমাদের আত্মরক্ষার সক্ষমতা এবং আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প বুঝতে পারে না।

জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন বলেছে, এই হামলা বৈধ, যৌক্তিক এবং এর আইনগত ভিত্তি রয়েছে। ইসরাইলের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইরানি মিশন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস এরইমধ্যে বৈঠক করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইল অভিমুখী ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করার জন্য মার্কিন সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের সমস্ত বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, জর্ডান ও ইরাকের বিমানবন্দরগুলোতেও সাময়িকভাবে বিমানের ওঠা নামা স্থগিত করা হয়েছে।

গত শুক্রবার বৈরুতের উপকণ্ঠে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছিল হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৫৬ জন।

এর আগের দিন অর্থাৎ সোমবার ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে ৯৫ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই দিন আহত হন ১৭২ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে চলা মুহুর্মুহু হামলায় লেবাননে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশটির ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.