এফবিসিসিআই’র ব্যর্থতায় সিন্ডিকেট মহল ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’

গত দেড় দশকে বাজার নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা দেখিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। তাদের এই ব্যর্থতার কারণে অনেক বড় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের প্রভাবে অনেক নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজারমূল্য দ্বিগুণ, তিনগুণ বাড়িয়ে একটি মহল রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।

রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ কর্তৃক ‘এফবিসিসিআই’র সংস্কার বিষয়ক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এই সব অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেললে বক্তারা বলেন, বিগত ১৫ বছর যাবৎ এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে সার্বিকভাবে পরিচালিত হয় নাই। বরং এফবিসিসিআই দেড় দশকে অনির্বাচিত, একদলীয় স্বৈরাচারী সরকারের তোষামদি, ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিল সহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল। এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব শুধুমাত্র কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট হাউজগুলোর স্বার্থ রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিল। সর্বদা গণভবনে তোষামোদকারী সুবিধাবাদী চক্র দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর জবাবদিহীতাবিহীন এফবিসিসিআই এবং এর অধীনস্থ চেম্বার এবং এসোসিয়েশনগুলিকে তাদের পকেট সংগঠন হিসাবে নিয়ন্ত্রন করেছিল। ফলে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবৎ এফবিসিসিআইয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল।

বক্তারা আরও বলেন, গত ১৮ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদ সদস্যরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর পর্ষদ বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন করেন এবং সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগ দেন।

এ সময় বক্তারা ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে, এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনের আগে এর অধিভুক্ত সব অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন করা দাবি জানান।

এই প্রস্তাবনার যৌক্তিকতার বিষয় উল্লেখ করে তারা বলেন, বিগত ১৫ বছরে অধিকাংশ চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশন সমূহে সীমাহীন দলীয়করণ করা হয়েছে। অধিকাংশ চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ছাত্র-গণহত্যার সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামি এবং অনেকেই পলাতক অবস্থায় রয়েছেন, ফলে বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সত্যিকারের সৎ, যোগ্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এফবিসিসিআইয়ের সদস্যভুক্তি অত্যন্ত জরুরি। এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনের পূর্বে এফবিসিসিআই অধিভুক্ত সব চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলো বিলুপ্ত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।

সংস্কার বাকি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- মনোনীত পরিচালক প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করা। সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ ছোট করা। সহ-সভাপতি ৭ জনের স্থলে ৩ জন করা।
এছাড়া পরিচালনা পর্ষদ ছোট করে চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ২৫ জন পরিচালক নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করা। এফবিসিসিআইসহ সব অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারে পরপর দুইবার নির্বাচিত কর্মকর্তাদেরকে কমপক্ষে একবার বিরতি গ্রহণ করতে হবে।

সর্বশেষ দাবি, নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পরে সাধারণ ভোটারদেরকে যেকোনো উপহার, উপঢৌকন প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে জরিমানাসহ আজীবন সদস্যপদ বাতিলের মতো কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মানার জন্য লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রদান করবেন বলে সংস্কার প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের সমন্বয়ক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী খকন বলেন, ‘বিগত স্বৈরাশাসকের শাসনকালে যে সকল সুবিধাভোগীরা দায়িত্বে ছিল তাদের কাছে সকল অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। আমর তখন কোন দায়িত্বে ছিলাম না। আমরা বিগত দেড় দশকের কোন দায় দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়।’

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআইয়ের বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের সমন্বয়ক আবুল কাসেম হায়দার, জাকির হোসেন নয়ন, জাকির হোসেনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীক নেতারা।

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.