বেরসিক বৃষ্টির ফলে কানপুর টেস্টের প্রথম দিনের দুপুর নাগাদ পরিত্যক্ত করা হয়েছিল সেদিনের খেলা।বৃষ্টি এবং ভেজা আউটফিল্ডের কারণে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে মাঠে গড়ায়নি একটি বলও। প্রায় আড়াইদিনের অপেক্ষা শেষে কানপুরের গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ব্যাটে-বলের লড়াই। ৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামে মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক।
আড়াই দিনের অপেক্ষা শেষে খেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম ওভারে আকাশ দীপের হাতে বল তুলে দেন রোহিত শর্মা। অন্য প্রান্তে ভারতের অধিনায়কের পছন্দ ছিলেন জসপ্রিত বুমরাহ। বল হাতে নেয়ার পর থেকেই মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে অফ স্টাম্পের বাইরে একই লেংথে বোলিং করে যাচ্ছিলেন ডানহাতি এই পেসার। ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বুমরাহর ডেলিভারিগুলো ছেড়ে দিচ্ছিলেন মুশফিক। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটারকে ফেরাতে এবার একটু ফুলার লেংথে ফেলে একটু ভেতরে ঢোকালেন বুমরাহ। আগের মতো এবার ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৩২ বল খেলা এই ব্যাটার করেছেন ১১ রান।
জসপ্রিত বুমরাহর বলে মুশফিকুর রহিম বোল্ড হয়ে ফেরার পর সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন লিটন দাস। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে আতহার আলী জানান, ডান এবং বাম হাতের কম্বিনেশনের জন্য সাকিবের পরিবর্তে লিটনকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এমন সময় প্যাড পড়ে ড্রেসিং রুমে ব্যাটিং শ্যাডো করছিলেন সাকিব। মুশফিক ফেরার পর ব্যাটিংয়ে এসে বুমরাহর এক ওভারে তিন চার মেরেছেন লিটন।
মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম বলে মুমিনুল হককে কট আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক অবশ্য তৎক্ষণাৎ রিভিউ নিয়েছিলেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মুমিনুলের ব্যাট নয় উরুতে আঘাত হেনেছে। তাতে রিভিউ নিয়ে জীবন ফিরে পান বাঁহাতি এই ব্যাটার। জীবন পাওয়ার পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে পুল করে চার মেরে ১১০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ক্যারিয়ারে ২০ হাফ সেঞ্চুরি করা মুমিনুলের ভারতের মাটিতে এটিই প্রথম।
মুশফিক ফেরার পর ব্যাটিংয়ে এসে বেশ সাবলীল ছিলেন লিটন দাস। বুমরাহর এক ওভারে তিন চার মারা ডানহাতি ব্যাটার বাউন্ডারি বের করতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ সিরাজের বিপক্ষেও। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে মিড অফ উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে শর্ট মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত শর্মা এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলে সাজঘরে ফিরতে হয় ১৩ রান করা বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটারকে। ৬ ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো সিরাজকে উইকেট দিলেন লিটন।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে চার মারলেন সাকিব আল হাসান। পরের বলে বাঁহাতি ব্যাটার অশ্বিনের একই জাতীয় ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে চাইলেন লং অন এবং লং অফের উপর দিয়ে। তবে হাত থেকে ব্যাটের গ্রিপ খানিকটা ফসকে যাওয়ায় টাইমিং হলো না ঠিকঠাক। মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ সিরাজ অনেকটা পথ দৌড়ে গিয়ে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়েছেন। কানপুর টেস্টের আগে অবসরের ঘোষণা দেয়া সাকিবকে ফিরতে হয়েছে ৯ রানে।
ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে অবিচল ছিলেন মুমিনুল হক। বাঁহাতি এই ব্যাটার উইকেটে থাকতেই সাজঘরে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস এবং সাকিব আল হাসান। তবে ভারতের পেসার ও স্পিনারদের সমানতালে শাসন করেছেন তিনি। লাঞ্চের এক ওভার আগে মোহাম্মদ সিরাজের গুড লেংথে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়েছিলেন মুমিনুল। যদিও বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি কোহলি।
জীবন পাওয়ার পরের ওভারে অশ্বিনকে সুইপে চার মেরে ১৭২ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল। দেশের বাইরে এটি তার দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথমটি করেছিলেন ২০২১ সালে পাল্লেকেলেতে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে অবশ্য মুমিনুলের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ভারতের মাটিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল। এর আগে ২০১৭ সালে প্রথমবার সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম।
৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে সকালের শুরুতেই মুশফিকুর রহিমকে হারায় বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় ফিরে গেছেন লিটন দাস, সাকিব আল হাসানও। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ৩১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৯৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। যেখানে সেঞ্চুরি পাওয়া মুমিনুলই করেছেন ৬২ রান। ৪০ মিনিটের লাঞ্চ বিরতি শেষে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে মিরাজ ও মুমিনুল।
লাঞ্চ থেকে ফেরার পর জসপ্রিত বুমরাহর ওভারের প্রথম বলে চার মেরে মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটির পঞ্চাশ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের বলে ডানহাতি ব্যাটার মেরেছেন আরও এক চার। সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকলেও ভারতের পেসারের বিপক্ষে টিকতে পারলেন তিনি। বুমরাহর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২০ রান করা মিরাজ। পরের ওভারে এসে তাইজুল ইসলামকেও ফিরিয়েছেন বুমরাহ।
মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে লাঞ্চ থেকে ফেরার পরের সময়টা বাংলাদেশের জন্য কেবলই হতাশার। মাত্র ৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে মাত্র ২৮ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ে শুরু, এরপর ফিরলেন তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ এবং খালেদ আহেমেদ। একপ্রান্ত আগলে রাখা মুমিনুল অপরাজিত থাকলেন ১০৭ রানে। খালেদকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০০তম উইকেটের দেখা পেলেন রবীন্দ্র জাদেজা।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.