বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভূমিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ সমন্বয়ক এবং সহসমন্বয়ক প্রকাশ্যে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক এবং বর্তমান নেতা। তবুও আন্দোলনের একক স্টেকহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদকে দাবি করছি না। অন্ধকারের ঘনঘটা কেটে যাওয়ায় সুদিনে এসে বিন ইয়ামিন মোল্লা কিংবা নাজমুল হাসানকেও একক মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দাবি করছি না।

এটা কোনো পরিকল্পিত আন্দোলন ছিল না- এটা ছিল গণঅভ্যুত্থান। হাসিনার ‘রাজাকার’ বলার মাস্টারমাইন্ড কে? মেট্রোর পিলার ধরে কান্না করার মাস্টারমাইন্ড কে? ছাত্রদের উপর্যুপরি গুলি করার মাস্টারমাইন্ড কে? হাসিনা এসব মিসটেক করেছিল বলেই তো আন্দোলন বেগবান হয়েছিল।

পরিস্থিতির বিকাশে দল-মত-নির্বিশেষে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর কাতারে এসে আন্দোলন করেছে সবাই- যে আন্দোলনে ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম দলসহ সবার অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকাকালে কোনো মাস্টারমাইন্ড কিংবা সমন্বয়কের নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়নি। স্পষ্ট করে বললে, ঐ সময়ে উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়ায় সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আন্দোলন বেগবান হয়েছে, কোনো সমন্বয়কের নেতৃত্বে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক যোগ্য ব্যক্তিতে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অজুহাত দেখানো হয়েছে- যেখানে নাহিদ ইসলাম,আসিফ মাহমুদসহ প্রথম সারির অনেকেই একটি ছাত্র সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বিন ইয়ামিন মোল্লা, নাহিদ উদ্দিন তারেক, নেওয়াজ খান বাপ্পী, সাব্বির হোসাইন, জানে আলম অপুসহ অনেক ছাত্রনেতাকে ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় স্পেস দেওয়া হয়নি। তবুও সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে গেছে।

ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঢাকা কলেজ – সাইন্সল্যাবের আন্দোলনে শুরু থেকে শেষ অবধি জীবনঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে নাজমুল – রাকিব। লোকমুখে চর্চা হয়েছে নাজমুল হাসান ঢাবির শিক্ষার্থী হলে সে-ই আজ উপদেষ্টা হতো, কিংবা সমন্বয়কদের তালিকার শীর্ষে থাকত। নাজমুল হাসান ছাত্র অধিকার পরিষদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ নয় – তিতুমীর কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যারা যারা ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আছেন তাদের তালিকা আমার জায়গা থেকে প্রকাশ করলাম- (নাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের পদবি)

 

★ কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক

১. নাহিদ ইসলাম – ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী (১)

২. আসিফ মাহমুদ – সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৪)

৩. আব্দুল কাদের – সাবেক সামাজিকমাধ্যম সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৬)

৪. আব্দুল হান্নান মাসুদ – সাবেক সভাপতি, স্যার এএফ রহমান হল ও সমন্বয়ক, কর্মসূচি বাস্তবায়ন সেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৮)

৫. রিফাত রশিদ – সাবেক সাধারণ সম্পাদক, স্যার এএফ রহমান হল ও সমন্বয়ক, সাহিত্য সেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১২)

৬. হাসিব আল ইসলাম – সাবেক সমন্বয়ক, প্রচার ও প্রকাশনা সেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৩)

৭. লুৎফর রহমান – সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৫)

৮. আহনাফ সাঈদ খান – সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৬)

৯. মোয়াজ্জেম হোসেন – সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি (১৭)

১০. তরিকুল ইসলাম – সাবেক সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি (২২)

১১. নুসরাত তাবাসসুম – সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২৩)

১২. নাজমুল হাসান – সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি (৪৪)

১৩. ইব্রাহিম নিরব – সাবেক সহ-সমন্বয়ক, লালবাগ থানা (৪৭)

১৪. আসাদ বিন রনি – সাবেক সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ (৪৯)

 

★ কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক

১. শাকিল আহমেদ- সাবেক সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি (৫৬)

২. মো. রাকিব- সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা কলেজ (১০২)

৩. মো. সুজন মিয়া- দপ্তর সম্পাদক, সরকারি তিতুমীর কলেজ (১০৪)

৪. মেহেদী হাসান বাবু খান- সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা জেলা (১০৮)

৫. তসলিম হাসান অভি- সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি (১০৯)

এছাড়া আরও হাজার হাজার নেতাকর্মী সারা দেশে নেতৃত্ব দিয়েছে, আমি শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছি। তবুও আমার পক্ষে হয়তো সবার নাম যুক্ত করা সম্ভব হয়নি বা ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, থাকলে জানাবেন, সংযোজন-বিয়োজন করে দিবো।

পরিশেষে বলতে চাই, ২০২৪-এর বিজয় অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ২০১৮-এর কোটা সংস্কার আন্দোলনের। ২০১৮ না এলে ২০২৪ আসত না, মেনে নিতে হবে। ২০১৮-এর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, নুরুল হক নুর – তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পতন আদতে জুলাই-আগস্টে হলেও এর পেছনে রয়েছে বিরোধী দলগুলোর দীর্ঘ ১৫/১৬ বছরের ত্যাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছাত্রলীগ ছাড়া কোনো ছাত্র সংগঠন কথা বলতে পারত না, দাঁড়াতে পারত না, তখন ছাত্র অধিকার পরিষদ হামলা হবে নিশ্চিত জেনেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আঙুল তুলত। এগুলো তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিএনপি-জামায়াত-গণঅধিকারসহ সব রাজনৈতিক দলের ত্যাগের ফসল আজকের এই বাংলাদেশ। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড কিংবা সমন্বয়ক সারা বাংলাদেশের সব মুক্তিকামী জনতা, কোনো একক ব্যক্তি নয়।

লেখক: তানভীর আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা কলেজ

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.