ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে আইনি নোটিশ

ভারতে জাতীয় মাছ ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আমদানি-রফতানি কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক বরাবরে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

আইনজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, আইনি নোটিশে পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের আপামর জনগণকে বঞ্চিত করে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতিদানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছে। ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ। এই ইলিশ মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। এই ইলিশ মাছ যখন সমুদ্র থেকে নদীতে বিশেষ করে বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে আসে, তখন এই ইলিশ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে উঠে। এই কারণে সামুদ্রিক ইলিশের চেয়ে পদ্মার ইলিশ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু।

এতে বলা হয়েছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশাল ও বিস্তৃত সমুদ্র সীমা রয়েছে। ভারতের জলসীমায় ব্যাপকভাবে ইলিশ উৎপাদন হয়। এই বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের ইলিশ মাছ আমদানির কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্টরা ও মাছ রফতানিকারকরা সারা বছর ধরে পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ মজুদ করে রাখে এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে পদ্মা নদীর সব ইলিশ মাছ ভারতে রফতানি করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচার করে। বাংলাদেশের পদ্মা নদীর সব ইলিশ মাছ ভারতে রফতানি ও পাচার হওয়ার কারণে বাংলাদেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার নদীর ইলিশ পায়না। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনগণকে সামুদ্রিক ইলিশ খেতে হয়, যা পদ্মার ইলিশের মতো সুস্বাদু নয়।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে যে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়, তা বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। এমতাবস্থায় যদি পদ্মার সব ইলিশ ভারতে চলে যায় তাহলে বাংলাদেশের জনগণ এই পদ্মার ইলিশ খেতে পারবে না। এভাবে বাংলাদেশের জনগণকে পদ্মার ইলিশ থেকে বঞ্চিত করে ভারতের জনগণকে পদ্মার ইলিশ খাওয়ানো বাংলাদেশের সরকারের জন্য সমীচীন নয়। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র ভারত থেকে আমদানি করে থাকে কিন্তু ভারত সরকার কখনোই তার নিজের দেশের জনগনের চাহিদা না মিটিয়ে বাংলাদেশে কোন পণ্য রফতানি করে না।

বাংলাদেশের রফতানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রফতানি যোগ্য কোন মাছ নয়। এমতাবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন।

নোটিশ প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে ভারতে ইলিশ রফতানির বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.