চেন্নাই টেস্টে দ্বিতীয় দিনেই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারত। তৃতীয় দিন সকালেও সেটা অব্যাহত রাখে ভারত। দাপটের সঙ্গে প্রথম সেশন এবং দ্বিতীয় সেশনের প্রায় অর্ধেক সময় ব্যাটিং করে দলটি। চার উইকেটে ২৮৭ রানের সময় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ৫১৫ রানের লক্ষ্য দেয় দলটি। জবাবে ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করেছে বাংলাদেশ। জসপ্রীত বুমরাহ, আকাশ দীপকে শুরু থেকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে থাকেন সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান। স্টাম্প লাইনে আসা ভারতের পেসারদের ভালো বলগুলো খুব দক্ষতার সঙ্গে ডিফেন্স করতে থাকেন তারা। আর বাইরের বলগুলো লিভ করতে থাকেন জাকির-সাদমান। দেখতে দেখতে বাংলাদেশকে পঞ্চাশ রান পার করে নিয়ে যান এই দুজন। ১২ ওভারের প্রথম বলে পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় লাল-সবুজের দল।
তবে ৬০ রানের বেশি স্থায়ী হলো না ওপেনিং জুটি। এই জুটি ভাঙেন জসপ্রীত বুমরাহ। চা বিরতির একটু পর তার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে গালি অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন জাকির। বাম দিকে নিচু হয়ে দারুণ একটি ক্যাচ নেন ইয়াশভি জায়সাওয়াল। ফেরার আগে ৪৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন জাকির।
এর আগে শুভমান গিল এবং ঋষভ পান্ত দুজনই তৃতীয় দিন সকাল থেকে আগ্রাসী ভঙ্গিমায় ব্যাটিং করতে থাকেন। দিন শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল। মেহেদী হাসান মিরাজের একই ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। এই জুটি ভাঙতে সকাল থেকে একপ্রান্তে মেহেদী হাসান মিরাজ, আরেকপ্রান্তে পেস আক্রমণ চালান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
হাফ সেঞ্চুরির পর আরও দেখেশুনে খেলেন গিল। সতর্ক হন পান্তও। তবে বাংলাদেশের বোলারদের কোনও দুজগ দেননি এই দুজন। দেখতে দেখতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন পান্ত। ৮৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি আদায় করেন এই বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটার। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ১২তম হাফ সেঞ্চুরির মাধ্যমে এই ফরম্যাটে নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙালেন পান্ত। দিনের ২৪তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেন সাকিব আল হাসান। তাকে দেখে যেন মারমুখী হয়ে ওঠেন পান্ত-গিলরা।
চার দিয়ে সাকিবকে স্বাগত জানান পান্ত। হাসান মাহমুদের করা পরের ওভারে পান্তের চার-ছক্কায় ১৩ রান তোলে ভারত। পরের ওভারে (৪৯তম) পান্তের সহজ ক্যাচ মিস করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল উপরে তুলে দেন পান্ত, লং অন থেকে দৌড়ে গিয়ে মিড উইকেটে সেটা লুফে নিতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৭২ রানে বেঁচে যান পান্ত।
মধ্যাহ্নভোজের পর আবারও সাকিবের ওপর চড়া হন পান্ত। একই ওভারে চার-ছক্কায় ১১ রান তুলে সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে যান তিনি। সাকিবের পরের ওভারেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান পান্ত। ১২৪ বলে পাওয়া সেঞ্চুরিটি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠতম সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরি করার পরের ওভারেই মিরাজের শিকার হন পান্ত। মিরাজকে সজোরে হাঁকাতে গিয়ে কট এন্ড বোল্ড হয়ে ফিরেন পান্ত। ফেরার আগে ১২৮ বল খেলে ১৩টি চার ও চারটি ছক্কায় ১০৯ রান করেন তিনি। পান্তের বিদায়ে ভাঙে গিলের সঙ্গে তার ১৬৭ রানের জুটি। পান্ত ফেরার একটু পর সেঞ্চুরির দেখা পান গিল। সাকিবের ওভারে টানা দুটি চার মেরে নিজের রান আরও বাড়িয়ে নেন তিনি। ১৬১ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই স্টাইলিস ব্যাটার। সেঞ্চুরির পর আরও জোরে হাত চালান গিল। তাকে সঙ্গ দেন লোকেশ রাহুল।
খুব দ্রুত ভারতের লিড পাঁচশ পেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই ইনিংস ঘোষণা দেন রোহিত শর্মা। চার উইকেটে ২৮৭ রান নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরত যান গিল-রাহুলরা। তাতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫ রানের। এই লক্ষ্য অতিক্রম করতে গেলে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হবে বাংলাদেশকে। ১৭৬ বলে দশটি চার ও চারটি ছক্কায় ১১৯ রানে অপরাজিত থাকেন গিল। রাহুল করেন ১৯ বলে ২২ রান।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.