ব্যবসায়ীদের বৈঠকে উঠে এলো ডলার সংকট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি 

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ডলার সংকটের কারনে তাদের অর্থ দেশে নিতে পারছে না। দেশের শিল্পকারখানার চলমান অস্থিরতাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। শনিবার রাজধানীতে এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির দেশীয় প্রধানেরা সফররত একটি মার্কিন সরকারি প্রতিনিধিদলের কাছে এ মনোভাব তুলে ধরেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির অর্থ বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান।

এ বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ও সরকারের কাছে পাওনা অর্থের বিষয়টিও বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।

মার্কিন জ্বালানি খাতের কোম্পানি শেভরন, বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট, কোমল পানীয় কোম্পানি কোকাকোলা, বহুজাতিক আর্থিক কোম্পানি সিটি ব্যাংক এনএ, মাস্টারকার্ড, জেনারেল ইলেকট্রনিকস বা জিইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রধানেরা বৈঠকে অংশ নেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভসহ সফররত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক অংশ নিয়েছেন এমন একাধিক ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কার্যরত মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা ব্যবসা–বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় তাঁরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশ প্রধানেরা ব্যাংক খাতের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য এবং ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতিকে ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। পাশাপাশি করব্যবস্থার বৈষম্য ও হয়রানি বিনিয়োগ ও ব্যবসা–বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানান এসব ব্যবসায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধিদলকে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের করব্যবস্থা এমন যে যারা সব আইনকানুন মেনে কর প্রদান করে থাকে, তাদের ওপর করের চাপ বেশি পড়ে। যেহেতু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আইন মেনে ব্যবসা–বাণিজ্য করে, তাই তাদের ওপর করের বোঝা প্রতিবছর বাড়তেই থাকে। এ কারণে করব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ চার বছরের বেশি সময় ধরে তাদের লভ্যাংশের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরে। পাশাপাশি সরকারের কাছে পাওনা বাবদ শেভরনের বিপুল অনাদায়ি অর্থের কথাও প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মুনাফা পাঠাতে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটার পক্ষ থেকে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ ধরনের পরিস্থিতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ডলার–সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে মেটলাইফ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মুনাফার অর্থ পাঠাতে পারেনি। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ এ দেশে আটকে আছে। একইভাবে শেভরনও দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছ থেকে তাদের পাওনা বুঝে পাচ্ছে না।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.