দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এ সেবার জনপ্রিয়তা ও লেনদেন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দিনে লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার ১৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা । এর আগের মাসে লেনদেন হয়েছিলো ৭৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
দেশের ব্যাংক খাতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। যাত্রা শুরুর মাত্র ১১ বছরে এই সেবার একাউন্ট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ৫০৩টি। গত জুলাই মাস শেষে দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এ রকম এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ হাজারের বেশি। আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয় ২১ হাজার ৩৬৬টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একই সময় এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে রাখা আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। এর আগের মাসের চেয়ে যার পরিমাণ ১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২০ শতাংশ কম।
এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বিকাশের অন্যতম কারণ হলো, এটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী সেবা। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তাঁর বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। তাই গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে।
জানা যায়, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিলে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। আর বাংলাদেশে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। তারা পরীক্ষামূলকভাবে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করেন এজেন্টরা। তাঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপযোগ সেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর অর্থও উত্তোলন করা যায়।
এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন এসব এজেন্ট। তবে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই এজেন্টদের।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, কেউ বাসার পাশে সেবা পাওয়ায়, আবার কেউবা সঞ্চয়ের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খুলেছেন। করোনাকালে ব্যাংকগুলোর অনেক শাখা খোলা না থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং ঠিকই খোলা ছিল। এ কারণে এই সেবার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রাখার পাশাপাশি ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স আনার পরিমাণও বেড়েছে।
অর্থসূচক/এমএইচ



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.