বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে তীব্র সংকটে থাকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য গ্রাহকের জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী ধারার অধিকাংশ ব্যাংক দৈনিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। তারল্য সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ সহায়তা বন্ধের কারণে চাহিদামতো গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে ধার নিতে হলে বন্ড অথবা যে কোনো সম্পদ জামানত রাখতে হয়। কিন্তু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের জামানত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বিশেষ সুবিধা চাচ্ছে ব্যাংকটি।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ছিল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকটিকে এস আলম মুক্ত করা হয়। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ব্যাপক সমালোচিত এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি থেকে বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকের তারল্য সংকট এক দিনে তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ হাতে গোনা কিছু মানুষের ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক খাত। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে এত দিন নগদ সহায়তা দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে যাত্রা করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক)। কিছুদিন পর গ্লোবাল ইসলামীতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে। এ ব্যাংক যা ঋণ দিয়েছে, তার বেশির ভাগই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের নামে।
পি কে হালদারের সময় বিভিন্ন নামে টাকা বের করে নেওয়ার পর ব্যাংকটি আর খুব একটা ঋণ বিতরণ করেনি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আর আদায় হয়নি। প্রতিবছর সুদযুক্ত হয়ে তা শুধু বাড়ছে। ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা, যার ১২ হাজার কোটি টাকার সুবিধাভোগী এস আলম গ্রুপ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বিল বন্ড জামানত রেখে স্বল্পমেয়াদি (এক দিন) ধার করছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এর পরও আমানতকারীদের টাকা তোলার চাপ সামাল দিতে পারছে না তারা। এই সুযোগে তুলনামূলক সবল ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে বহুগুণ।
সূত্র আরও বলছে, ১ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৭ দিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেপোতে ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে নিয়মিত ধার নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন সপ্তাহে দুই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিতে পারে ব্যাংকগুলো। এই ১৭ দিনে এক লাখ ৭৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব ধারের মেয়াদ এক থেকে সাত, ১৪, ২৮ ও ১৮০ দিন পর্যন্ত। মেয়াদ অনুযায়ী সুদের হারও ছিল ভিন্ন।
অর্থসূচক/ মো. সুলাইমান



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.