ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পান্নাকে ভারতে না বাংলাদেশে খুন?

বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যুকে ঘিরে নতুন রহস্য দানা বাঁধছে। সম্প্রতি পান্নার মৃতদেহ ভারতের মেঘালয়ে খুঁজে পাওয়ার পরে ওই রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে তাকে খুন করা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হত্যা করে দেহ ভারতে ফেলে যাওয়া হয়েছিল, নাকি ভারতেই তিনি খুন হন। বাংলাদেশে খুন হয়ে থাকলে কী কারণে ভারতের ভেতরে গিয়ে লাশ ফেলে আসা হয়েছে, দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে এভাবে লাশ নিয়ে যাওয়া কী সম্ভব-এমন প্রশ্নও প্রাসঙ্গিতভাবেই আসছে।

ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে ইসহাক আলী খান পান্না আত্মগোপনে ছিলেন। এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট তার পরিবার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে মেঘালয়ের শিলংয়ে পান্নার মৃতদেহ পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তখন তার বেশ কয়েকজন আত্মীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভারতে পালানোর সময় শিলংয়ে পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা জেনেছেন। কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা হয়, পালানোর সময় বিএসএফের গুলিতে মারা যান পান্না।

ওই খবরের দুই দিন পর ২৬ আগস্ট ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ  জানায়, ভারত সীমান্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরে ইস্ট জন্তিয়া হিলস জেলার একটি সুপারি বাগানে পান্নার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট থেকে তারা পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন।

ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের গলার দাগ থেকে তারা মোটামুটি নিশ্চিত শ্বাসরোধ করে তাকে (পান্না) হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাতেরও চিহ্ন রয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, যে তারা প্রাথমিক তদন্ত গুটিয়ে আনার পথে। দেহের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে জেলাটির সদর শহর খ্লিরিয়াৎ-এর সিভিল হাসপাতালে। সেখানকার মর্গেই তার মরদেহ রাখা রয়েছে এখন।

বিএসএফ বলছে, মেঘালয়ে ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ পাওয়া গেলেও তাকে ভারতে খুন করা হয়নি বলেই তাদের মনে হচ্ছে। তারা এটাও জোর দিয়ে বলছে যে সাম্প্রতিক সময়ে মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছেন, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই।

যদি বিএসএফের দাবি সত্যি হয় তাহলে প্রশ্ন উঠে- একটি মৃতদেহ নিয়ে সীমান্ত রক্ষীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে কেউ বা কারা ভারতে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায় নি।

তবে এর আগে বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহেমদকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কেউ বা কারা বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে নিয়ে এসে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।

যদিও তখন অভিযোগ উঠেছিল যে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থা কাজটি করেছিল।

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে গল্ফ কোর্সের কাছে ২০১৫ সালের ১১ মে খুব সকালের ঘটনা সেটা।

ওখানে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী বিবিসি বাংলাকে সেই সময়ে বলেছিলেন যে ওই ব্যক্তি অচেনা জায়গায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে এটা কোন জায়গা।

তারপরে তিনি নিজের পরিচয় দেন যে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। নিজের নামও বলেন তিনি।

তারপরে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

তার ঠিক দুমাস আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়েও এই রহস্যের কিনারা হয় নি যে কারা মি. আহমেদকে শিলংয়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল।

তাই ইসহাক আলী খান পান্না কীভাবে ভারতে এসে খুন হলেন, নাকি তাকে বাংলাদেশে কেউ খুন করে ভারতে ফেলে রেখে গেল, এসব প্রশ্ন এখনো অমিমাংসিত রয়ে গেছে।

বিবিসি বাংলা অবলম্বনে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.