গতকাল রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের পথরোধ করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এক অপরিচিত ব্যক্তি। এ ঘটনা সম্পর্কে জানাতে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার দপ্তরে গেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শীর্ষ নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে।
সচিবালয়ে আসা প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেন, আমার নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় নিয়ে উপদেষ্টার কাছে এসেছি। আমি জানতে পেরেছি উপদেষ্টা এখনও পথেই আছেন। তিনি এলে আমরা কথা বলবো।
এর আগে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোহেল তাজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লেখেন, আজকে রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় একটি খুবই আতঙ্কজনক ও রহস্যজনক ঘটনার শিকার হই। একজন মোটরসাইকেল আরোহী আমাকে সংসদ ভবন থেকে ফলো করে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে চলে আসে এবং একটা সময় তার বুকে লাল-নীল বাতি জ্বালিয়ে আমাকে থামতে বলে। আমি থামার পর তার পরিচয় জানতে চাই এবং আমাকে কেন থামতে বললেন তা তাকে জিজ্ঞেস করি। প্রতিউত্তরে সে আমাকে বলে যে তাদের লোক আসছে আর আমার তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি আবার তার পরিচয় জানতে চেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা। জবাবে সে আমাকে বললো আমি আপনাকে চিনি- আপনি সোহেল তাজ। তারপর সে মোবাইল ফোনে বললো যে সে আমাকে থামিয়েছে এবং লোকেশন জানিয়ে আসতে বললো। আমি আবার তার পরিচয় জানতে চেলাম এবং কারা আসছে আর কেন আমাকে থামিয়েছে জানতে চাইলাম। সে কোন উত্তর না দিয়ে আবার ফোনে কথা বললো তারপর আমাকে বললো চলে যেতে আর সেও মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে চলে গেল।
তার কথা বলার ধরণ এবং আচরণে আমি একেবারে কনফিডেন্ট সে কোন গোয়েন্দা সংস্থার লোক। এই ভাবে মানুষকে যাতে হয়রানি না করা হয় সেটাই ছিল আমাদের সকলের প্রত্যাশা- এখন দেখা যাচ্ছে একই কায়দায় সব চলছে- ছি ছি।
তিনি আরও লেখেন, এই ঘটনার তদন্ত করা প্রয়োজন এবং ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গীর গেটের প্রবেশ পথের হাই রেসুলেশন ক্লোস্ড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই ধরা পরবে কে এই মোটরসাইকেল আরোহী- সময় রাত ১০:৫০ মিনিট থেকে ১১:০০- আমার গাড়ি এই সময়ের মধ্যে প্রবেশ করে এবং পেছনেই এই মোটরসাইকেল আরোহী ছিল।
যদিও সোহেল তাজকে এভাবে অনুসরণের বিষয়টি আসলেই রহস্যময় ও উদ্বেগজনক। স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ পারিবারিকভাবেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মা জোহরা তাজউদ্দিন ছিলেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। সোহেল তাজ আওয়ামীলীগ থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে কিছুদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রহস্যজনক কারণে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে সেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। গত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ তার মূল আদর্শের বাইরে পরিচালিত হওয়ায় তিনি রাজনীতি থেকে সরে গেছেন বলে আভাস দিয়েছেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন। এমন কি সাবেক ডিবি প্রধান হারুন যখন আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে আটকে রেখেছিল, তখন তিনি হারুনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চেয়েছিলেন।
ঘটনা প্রবাহ থেকে স্পষ্ট সোহেল তাজ মোটেও কট্টর ও সুবিধাভোগী আওয়ামীলীগার ছিলেন না। তাই এই সরকারের মেয়াদে নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে গোয়েন্দারা যদি আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুসরণ করেও থাকেন, তাতেও সোহেল তাজকে অনুসরণ করার কথা নয়। তবে কী গোয়েন্দাদের মধ্যে এখনো পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের কট্টর সদস্য আছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানানোয় সোহেল তাজের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সোহেল তাজকে অনুসরণ করতে চান।
শুধু অনুসরণ নয়, ওই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য যে অন্য কিছু ছিল, তা সোহেল তাজের পোস্ট থেকেই স্পষ্ট। কারণ অনুসরণকারী ব্যক্তি সোহেল তাজের গাড়ি থামিয়ে ফোনে অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এই তথ্য জানিয়েছেন। সোহেল তাজের অবস্থান জানিয়ে তাদেরকে সেখানে আসতে বলেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আবার চলেও গেছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কী তারা সোহেল তাজকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন? কিন্তু পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় পরিকল্পনা আজকের মতো বাদ দিয়েছেন। নাকি সোহেল তাজের গাড়িতে ড্যাশ ক্যাম থাকার বিষয়টি অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আর সব কিছু রেকর্ড থেকে যাবার ভয়ে তারা বেশিদূর এগুনো নিরাপদ মনে করেননি?
অর্থসূচক/এএকে/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.