পুলিশ হেফাজতে ৪ শতাধিক আনসার

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়ার মধ্যেই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। একই দাবিতে রবিবার সকালেও প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন তারা। এক পর্যায়ে তারা বেলা ১২টার দিকে সচিবালয়ের চারপাশে পাঁচটি ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে আনসার সদস্যদের সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয়।

রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আনসার সদস্যরা। এতে তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীদের পাল্টা হামলায় তারা সচিবালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সচিবালয় এলাকা থেকে প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যদের হেফাজতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর আগে সচিবালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে গেলে সেখানে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রথমে অল্প কিছু শিক্ষার্থী সচিবালয় এলাকায় আসলে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটে শিক্ষা চত্বরে অবস্থান নেন। পরে চারদিক থেকে আরও সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এসে আনসার সদস্যদের ধাওয়া দেন। এ সময় তাদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি পথও খোলা রাখা হয়। ধাওয়া খেয়ে আনসারদের একটি অংশ জিপিও হয়ে, আরেকটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে চলে বেরিয়ে যান। অবশ্য তখনও কিছু সংখ্যক আনসার সদস্য সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে আটকা পড়েন। সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশই তাদের রক্ষার চেষ্টা করেন।

সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন তারা। এ সময় বেশিরভাগ আনসার সদস্য ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও আটকা পড়েন চার শতাধিক সদস্য। মধ্যরাতে কিছু আনসার সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে। এ সময় কিছু আনসার সদস্যকে নিজেদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলতেও দেখা গেছে। হাত জোর করে ক্ষমাও চেয়েছেন কেউ কেউ। পরে সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের নাম খাতায় লিপিবদ্ধ করে প্রিজন ভ্যানে তোলেন। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতেই তাদের প্রিজন ভ্যানে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কর্মকর্তারা।

সাড়ে ১০টার দিকে গেট খুলে দিলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন অবরুদ্ধ উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গেটের সামনে তাদের স্বাগত জানান শিক্ষার্থীরা। পরে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণের নেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.